পুলিশি হামলার প্রয়োজন ছিল কি?
শেষ পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। তাকে উদ্ধার করতেই পুলিশ এই অভিযান চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশি হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। পদত্যাগ করেছেন সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজা।
আমরা মনে করি, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না। আন্দোলনরত ছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ছাত্রলীগ হামলা করেছিল বলেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ছাত্রলীগের হামলার পর ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হন। এই কঠোর কর্মসূচির অংশ হিসাবে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হয়। আমরা একটা বিষয় লক্ষ করে আসছি-যে কোনো ধরনের আন্দোলন, সেটা কোটা সংক্রান্ত আন্দোলন হোক, অথবা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন-ছাত্রলীগ সেই আন্দোলন পণ্ড করতে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ব্যবহার করছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সংহতি প্রকাশ করার কথা, অথচ তারা তা না করে উলটো ঝাঁপিয়ে পড়ছে আন্দোলনকারীদের ওপর। এ প্রবণতা নিন্দনীয় অবশ্যই। স্মরণ করা যেতে পারে, কিছুদিন আগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্তা হওয়ার পরিণতিতে এক শিক্ষকের অকাল মৃত্যু হয়েছে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেটা নেওয়া হলে পরিস্থিতি হয়তো এতটা গুরুতর অবস্থায় যেত না। অবস্থা যা-ই হোক, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রয়োজন ছিল কিনা, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছিল, সেগুলোর মধ্যে কিছু দাবি যৌক্তিক বটে। এই দাবিগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটা মীমাংসায় পৌঁছাতে পারত, তাহলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটত না নিশ্চয়ই। আমরা মনে করি, আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা যেমন নিন্দনীয়, তেমনি ছাত্রলীগ বা পুলিশ লাঠিপেটার মাধ্যমে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করবে, সেটাও সমর্থনযোগ্য নয়। আমাদের বক্তব্য হলো, যা হওয়ার হয়ে গেছে বললে চলবে না। ছাত্রলীগের আচরণ, পুলিশি আক্রমণ-দুটো বিষয়কেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর ব্যাপারে একটা সুরাহা হওয়া উচিত।