Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মশান্তি প্রতিষ্ঠায় নবী-রাসুলদের আন্তরিকতা

শান্তি প্রতিষ্ঠায় নবী-রাসুলদের আন্তরিকতা

ইসলামের সার্বিক নীতিমালা ইহকালীন ও পরকালীন শান্তির জন্যই প্রণীত হয়েছে। জান্নাত সেই শান্তির চূড়ান্ত স্তর। তা অর্জনে সচেষ্ট মানুষের কর্মকাণ্ডে পৃথিবীর জীবনও জান্নাতি হয়ে ওঠে। নবী-রাসুলরা মানুষকে এই শান্তির পথ দেখিয়েছেন এবং শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে পরমতসহিষ্ণুতা, ধৈর্য, ক্ষমা, সমঝোতা ও ভালোবাসার পথ অবলম্বন করেছেন।

দাউদ (আ.)-এর পরমত সহিষ্ণুতা : দুজন লোক দাউদ (আ.)-এর কাছে উপস্থিত হয়। একজন মেষের মালিক এবং অন্যজন শস্যক্ষেতের  মালিক। শস্যক্ষেতের মালিক মেষ মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে মেষ রাতে তার ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। (মেষের মূল্য বিনষ্ট ফসলের সমান ছিল) দাউদ (আ.) রায় দিলেন যে মেষের মালিক তার সব মেষ শস্যক্ষেতের মালিককে দিয়ে দেবে। রায় নিয়ে বাদী ও বিবাদী দাউদ (আ.)-এর আদালত থেকে বের হলে দরজায় দাউদ (আ.)-এর পুত্র সুলাইমান (আ.)-এর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তাদের কাছ থেকে রায়ের আদ্যোপান্ত শোনেন। অতঃপর সুলাইমান (আ.) বলেন, ‘আমি রায় দিলে এর চেয়ে উত্তম হতো এবং উভয় পক্ষই উপকৃত হতো।’ তারপর তিনি পিতাকে বললেন, ‘আপনি মেষগুলো শস্যক্ষেতের মালিককে দিয়ে দিন। সে এগুলোর দুধ ও পশম দ্বারা উপকৃত হোক। আর ক্ষেত মেষ মালিককে দিয়ে দিন, সে তাতে চাষাবাদ করে ফসল উৎপন্ন করুক। যখন শস্যক্ষেত (মেষ বিনষ্ট করার) আগের অবস্থায় ফিরে যাবে তখন শস্যক্ষেত এবং মেষ নিজ নিজ মালিককে ফেরত দিন।’ দাউদ (আ.) খুশি হয়ে উভয় পক্ষকে ডেকে তা কার্যকর করেন। এতে সবাই খুশি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘এবং স্মরণ করো দাউদ ও সুলাইমানের কথা, যখন তাঁরা বিচার করছিল শস্যক্ষেত সম্পর্কে; তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার। এবং আমি সুলাইমানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আমি পর্বত ও বিহঙ্গকুলকে অধীন করে দিয়েছিলাম—তারা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত; আমিই ছিলাম এই সময়ের কর্তা।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৭৮-৭৯)

ইউসুফ (আ.)-এর ধৈর্য ও ক্ষমা : ইউসুফ (আ.) মিসরের খাদ্যমন্ত্রী ও পরবর্তী সময়ে সেখানকার শাসক হয়েছিলেন। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ফিলিস্তিনের কেনান এলাকা থেকে খাদ্যসামগ্রী লাভের আশায় ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরাও মিসরে তাঁর কাছে আসে। প্রায় ৩০ বছর আগে যে ভাইয়েরা তাঁকে কুয়ায় ফেলে দিয়েছিল তারা আজ অসহায় হয়ে খাদ্য ক্রয় করতে এসেছে। তারা কখনো ভাবেনি যে ইউসুফ (আ.) মিসরের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে। ইউসুফ (আ.) তাদের চিনতে পেরেছেন। তিনি প্রতিশোধের সুযোগ পেয়েও তাদের ক্ষমা করে দেন। ‘ইউসুফ (আ.) বলেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সব দয়ালুর চেয়ে বেশি দয়ালু।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত ৯২)

রাসুল (সা.)-এর সমঝোতা ও ভালোবাসা : রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়। তিনি মদিনায় পরস্পরবিরোধী চিন্তা, সংস্কৃতি ও ধর্মানুসারীদের একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ঐকমত্যে উপনীত করতে সচেষ্ট হন। তিনি সবাইকে একটি লিখিত চুক্তির অধীনে ঐক্যবদ্ধ করেন। এ চুক্তিই ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে খ্যাত। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও দেশপ্রেমে ঐকমত্যের আলোকেই ইসলামী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গোত্র-উপগোত্রে বিভক্ত জাতি শান্তিপূর্ণ জীবন ফিরে পায়। মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে তিনি সঙ্গীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নিতেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজেকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো, অতঃপর তুমি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯)

ষষ্ঠ হিজরিতে রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে ওমরাহ পালন করতে মক্কায় রওনা হন। মক্কার অদূরে কুরাইশদের বাধার মুখে সন্ধি করে ফিরে আসেন, যা ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’ নামে পরিচিত। বাহ্যত এটিকে পরাজয় মনে হলেও মহান আল্লাহ একে ‘প্রকাশ্য বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেন। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত ১)

হুদায়বিয়ার সন্ধিই মক্কা বিজয়ের পথকে সুগম করে। এভাবেই রাসুল (সা.) সংঘাত পরিহার করে সমঝোতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments