তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠকে প্রথমবারের মতো কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার কাছে লিখিতভাবে দেয়া ওই প্রস্তাব ও শর্তগুলো নিয়ে এরইমধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এসব দাবি কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। কিন্তু তিন ঘন্টার ওই বৈঠকে কী কী প্রস্তাব ও শর্ত দিয়েছে ইউক্রেন?
বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়াকে জানিয়েছে যে তারা আর কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না এবং নির্জোট থাকবে। ইউক্রেন একটি পারমাণবিক অস্ত্র-মুক্ত দেশ হবে এবং সেখানে বিদেশী কোনো সামরিক ঘাঁটি বা সেনাদল থাকবে না। তবে এর বিনিময়ে ইউক্রেনের নিরাপত্তার ব্যাপারে শক্ত আইনি গ্যারান্টি দিতে হবে। শুধু রাশিয়াই নয়, এই গ্যারান্টি নিশ্চিত করবে পশ্চিমা বিশ্বও। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ইউক্রেনের ওপর কোনো হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, চীন, তুরস্ক, ফ্রান্স, ক্যানাডা, ইটালি, পোল্যান্ড এবং ইসরাযইলের মত দেশগুলোকে ইউক্রেনের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসতে হবে।যে কোনো হামলা শুরুর তিনদিনের মধ্যে এসব দেশকে বৈঠকে বসতে হবে এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তায় রক্ষায় অংশ নিতে হবে।
ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকতে দিতে হবে বলেও শর্ত দিয়েছেন তাদের পক্ষের প্রতিনিধিরা। তাছাড়া তারা জানান, সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ২০১৯ সালে ইউক্রেনের সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এটি পরিবর্তনে কয়েক মাস সময় দিতে হবে। তবে এরপরই বেশ কিছু কঠিন শর্ত দিয়েছে ইউক্রেন, যা রাশিয়া মানবে না বলে অনেকটা নিশ্চিত বিশ্লেষকরা। এরমধ্যে আছে, আলোচনার মাধ্যমে ক্রাইমিয়ার সার্বভৌমত্ব নির্ধারিত হতে হবে এবং সেই আলোচনা ১৫ বছর ধরে চলতে পারে। কিয়েভ বলেছে এই সময়ে এই সংকট নিরসনে কোনো সামরিক ব্যবস্থা নেয়া যাবেনা। শুধু ক্রাইমিয়া নয়, পূর্বে ডনবাস অঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে মুখোমুখি কথা হতে হবে। ইউক্রেনের তরফ থেকে সর্বশেষ দাবি তোলা হয়েছে যে, তাদের ভূমি থেকে সব রুশ সৈন্যকে চলে যেতে হবে।
বিবিসির পল কারবি বলছেন, এ সব প্রস্তাবের অনেক কিছুই প্রেসিডেন্ট পুতিনের পছন্দ হবে না তা স্পষ্ট। বিশেষ করে ক্রাইমিয়া এবং ডনবাসের বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আপোষ-মীমাংসার কথা মস্কো শুনতেই চাইবে না। তাছাড়া, যেসব দেশের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ইউক্রেন চাইছে তাদের বেশিরভাগই ন্যাটো জোটের দেশ। এই প্রস্তাব রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে সে সম্ভাবনা কম।
এদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে এই আলোচনার পর অসন্তোষ দেখিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার জানান, ক্রাইমিয়া রাশিয়ার অংশ এবং এ নিয়ে অন্য কারো সাথে রাশিয়া কখনই কোনো আলাপ করবে না। আলোচনার পরদিন পেসকভ জানান, বৈঠকে এমন বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি যা নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। তবে তিনি বলেন, যেটা ইতিবাচক তা হলো ইউক্রেনীয়রা অন্তত কাগজে-কলমে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে। এতদিনে অন্তত সেটা হাতে পাওয়া গেছে। বাকিটা যা হয়েছে, তাকে আমরা বড় কোনো অগ্রগতি বলতে পারিনা। খুব বেশি আশা করার মত কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, ক্রাইমিয়া রাশিয়ার অংশ এবং রাশিয়ার কোনো ভৌগলিক অঞ্চল নিয়ে কোনো পক্ষের সাথে কোনো ধরণের মীমাংসা আলোচনা রাশিয়ার সংবিধানে নিষিদ্ধ। পেসকভের কথা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রাইমিয়া বা পূর্ব ইউক্রেনের রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো নিয়ে ইস্তাম্বুলের বৈঠকে ইউক্রেনের প্রস্তাবে রাশিয়া আদৌ খুশি নয়।