কোরআনে বর্ণিত ঘটনা
উজাইর (আ.) হলেন মহান আল্লাহর সেই বান্দা, যাঁকে তিনি এক শ বছর মৃত অবস্থায় রেখে পুনরায় জীবিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। সুরা বাকারায় ইরশাদ হয়, ‘অথবা সে ব্যক্তির মতো, যে কোনো জনপদ অতিক্রম করছিল, যা তার ছাদের ওপর বিধ্বস্ত ছিল। সে বলল, আল্লাহ একে কিভাবে জীবিত করবেন মরে যাওয়ার পর? অতঃপর আল্লাহ তাকে এক শ বছর মৃত রাখলেন। এরপর তাকে পুনর্জীবিত করলেন। বললেন, ‘তুমি কতকাল অবস্থান করেছ?’ সে বলল, ‘আমি এক দিন অথবা দিনের কিছু সময় অবস্থান করেছি।’ তিনি বললেন, ‘বরং তুমি এক শ বছর অবস্থান করেছ। সুতরাং তুমি তোমার খাবার ও পানীয়ের দিকে তাকাও, সেটি পরিবর্তিত হয়নি এবং তুমি তাকাও তোমার গাধার দিকে, আর যাতে আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে পারি এবং তুমি তাকাও হাড়গুলোর দিকে, কিভাবে আমি তা সংযুক্ত করি, অতঃপর তাকে আবৃত করি গোশত দ্বারা।’ পরে যখন তার কাছে স্পষ্ট হলো, তখন সে বলল, ‘আমি জানি, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৯)
ইসহাক ইবনে বিশর…আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে উজাইর (আ.) ছিলেন একজন জ্ঞানী ও পুণ্যবান লোক। একবার তিনি তাঁর ক্ষেত-খামার ও বাগ-বাগিচা দেখার জন্য ঘর থেকে বের হন। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনকালে দ্বিপ্রহরের সময় একটা বিধ্বস্ত বাড়িতে বিশ্রাম নেন। তাঁর বাহন গাধার পিঠ থেকে নিচে অবতরণ করেন। তাঁর সঙ্গে একটি ঝুড়িতে ছিল ডুমুর এবং অন্য একটি ঝুড়িতে ছিল আঙুর। খাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি একটি পেয়ালায় আঙুর নিংড়ে রস বের করে এবং শুকনো রুটি তাতে ভিজিয়ে রাখেন। তিনি রুটিগুলো রসের ভেতর ভালোভাবে ভিজলে খাবেন বলে কিছু সময় বিশ্রাম করতে থাকেন। এ অবস্থায় তিনি বিধ্বস্ত ঘরগুলোর দিকে খেয়াল করেন, যার অধিবাসীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে কিছু হাড় দেখতে পেয়ে তিনি মনে মনে ভাবেন, ‘মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ এগুলোকে কিভাবে জীবিত করবেন?’
মহান আল্লাহ যে মৃত্যুর পর জীবিত করতে সক্ষম এতে তাঁর কোনো সন্দেহ ছিল না। শুধু কৌতূহল ও বিস্ময় থেকে তিনি এমনটা ভেবেছিলেন। মহান আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন এবং তাঁর রুহ কবজ করিয়ে নেন। তিনি তাঁকে এক শ বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় রেখে দেন। এক শ বছর পূর্ণ হলে আল্লাহ তাআলা উজাইর (আ.)-এর কাছে ফেরেশতা পাঠান। ফেরেশতা এসে প্রথম উজাইর (আ.)-এর অন্তর ও চোখগুলো জীবিত করেন, যাতে তিনি মহান আল্লাহ কর্তৃক মৃতকে জীবিত করার প্রক্রিয়াগুলো স্বচক্ষে দেখতে পান এবং অন্তরের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারেন।
এরপর ফেরেশতা তাঁর বিক্ষিপ্ত হাড়গুলো একত্র করে তাতে গোশত লাগান, চুল-পশম ইত্যাদি যথাস্থানে সংযুক্ত করেন। চামড়া দিয়ে সমস্ত শরীর আবৃত করেন। সব শেষে তাঁর মধ্যে রুহ প্রবেশ করান। মহান আল্লাহর কুদরতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াই উজাইর (আ.) উপলব্ধি করছিলেন। উজাইর (আ.) উঠে বসলেন। আপনি এ অবস্থায় কত দিন ছিলেন, তিনি উত্তর দিলেন-এক দিন বা এক দিনেরও কম। ফেরেশতা জানালেন, না; বরং আপনি এক শ বছর এভাবে অবস্থান করেছেন। আপনার খাদ্যসামগ্রী ও পানীয় বস্তুর প্রতি লক্ষ করুন! দুটির একটিও নষ্ট হয়নি। সব কিছু একেবারে টাটকা ছিল। উজাইর (আ.) ফেরেশতার কথায় কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান। তাই ফেরেশতা তাঁকে বলেন, আপনি আমার কথায় সন্দেহ করছেন, তাহলে আপনার গাধাটির প্রতি লক্ষ করুন। উজাইর (আ.) লক্ষ্য করে দেখেন, তাঁর গাধাটি পচে-গলে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। হাড়গুলো পুরনো হয়ে যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। অতঃপর ফেরেশতা হাড়গুলোকে আহ্বান করলেন। সঙ্গে সঙ্গে হাড়গুলো চতুর্দিক থেকে এসে একত্রিত হয়ে গেল এবং ফেরেশতা সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিলেন। তারপর ফেরেশতা উক্ত কঙ্কালে রগ, শিরা-উপশিরা সংযোজন করেছেন। গোশত দ্বারা আচ্ছাদিত করে তাকে চামড়া ও পশম দ্বারা আবৃত করেন। সব শেষে তার মধ্যে রুহ প্রবেশ করান। ফলে গাধাটি মাথা ও কান খাড়া করে দাঁড়াল এবং কেয়ামত আরম্ভ হয়েছে ভেবে চিৎকার করতে লাগল।
এভাবেই মহান আল্লাহ উজাইর (আ.)-কে দুনিয়াতেই মৃতকে জীবিত করার প্রক্রিয়া দেখিয়ে দিলেন।