প্রতিদিন ৬০ লাখ গেমার খেলে থাকে লুডো স্টার ও পারচিসি। এগুলো ডাউনলোড হয়েছে ১০ কোটি ২৫ লাখেরও বেশি। শুধু তা-ই নয়, মাসে এগুলোর সক্রিয় ব্যবহারকারী আছে আড়াই কোটি। গেমগুলোর মালিক ভারতীয় গেম কম্পানি ‘গেমবেরি’। কিভাবে একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এই বিপুলসংখ্যক গেমারের আস্থা অর্জন করল?
সময়টা ২০১৭ সাল। মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান জিওর কল্যাণে ভারতে অনলাইন গেম বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। তখনই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব খড়গপুরের দুই ছাত্র আফসার আহমেদ ও গোবিন্দ আগরওয়াল একেবারে সাদামাটা একটি দেশি গেম ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করেন। গেমটির নাম ‘লুডো স্টার’। এরপর শুধু ইতিহাস! ভারতীয়রা সেই গেম লুফে নিতে শুরু করে। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় লুডো খেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। ফলে ভারতীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশ-পাকিস্তানসহ আরো বেশ কিছু দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে গেমটি। পাকিস্তানের গণমাধ্যমেও বেশ ফলাও করে প্রচার হয় লুডো স্টারের কথা। সে বছর পাকিস্তানের বড় একটি শ্রমিক দল মধ্যপ্রাচ্যে যায় কাজের উদ্দেশে। এসব প্রবাসীর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের কাছেও পৌঁছাতে শুরু করে লুডো। অল্প সময়ে গেমটিতে ফলাফল পাওয়া যায় এবং স্বল্প গতির ডাটা সংযোগ থাকলেও খেলাটা চালানো যায় বলে গেমটির জনপ্রিয়তা ক্রমে বাড়তেই থাকে।
আফসার আহমেদ ও গোবিন্দ আগরওয়াল তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘গেমবেরি ল্যাব’। গেমবেরির প্রথম গেম ‘লুডো স্টার’ বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত হওয়ার তিন মাস পর প্রতিদিন সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা গিয়ে ঠেকে প্রায় আড়াই লাখের ঘরে। এই সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গেই গেমবেরি আরেকটি গেম নিয়ে কাজ শুরু করে। নতুন এই গেমটির নাম ‘পারচিসি স্টার’। এটিও অনেকটা লুডো স্টারের ধাঁচেরই। লুডো স্টার ভারতীয় সংস্কৃতির ধারায় বানানো; অন্যদিকে ‘পারচিসি স্টার’ অনেকটা স্প্যানিশ ধরনের। তবে দুটি গেমেই একই ধরনের কোডিং ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ পারচিসি স্টার কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন ছাড়াই প্রায় ১০ লাখ দৈনিক ব্যবহারকারী পায়, যার ৭০ শতাংশই স্পেনের। মরক্কো, কলম্বিয়া, মেক্সিকো ও ডোমিনিকান রিপাবলিকের খেলোয়াড়রাও প্রবলভাবে আকৃষ্ট এই পারচিসি স্টারের প্রতি।
২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত গেমবেরির এই দুটি গেমে দৈনিক ২২ লাখ গেমার একবার হলেও ঢু মারত, যার বেশির ভাগই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব আর স্পেন থেকে। তবে এপ্রিল থেকে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে লকডাউন শুরু হলে এক লাফে প্রায় দেড় কোটি দৈনিক ব্যবহারকারী পেতে শুরু করে গেমবেরি ল্যাব। এটি পৃথিবীর যেকোনো গেমিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য মাইলফলক।
বর্তমানে লুডো স্টারের শতকরা ৯০ ভাগ ব্যবহারকারী ভারতের বাইরের দেশের। গেমবেরির প্রতিষ্ঠাতারা ভারতীয় বাজারের চেয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরতে বেশি আগ্রহী। কারণ তাঁদের মতে, এসব দেশের কিশোর ও তরুণরা ছোট থেকেই গেম খেলে অভ্যস্ত এবং তারা জানে পৃথিবীর কোনো কিছুই বিনা মূল্যে পাওয়া যায় না। সে জন্য তারা যেকোনো গেমের কনটেন্টের জন্য অর্থ প্রদান করতেও রাজি। তবে বেশির ভাগ ভারত উপমহাদেশের গেমাদের কাছে গেম মানেই বিনা মূল্যে পাওয়ার সামগ্রী।