ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি লাগাম ছাড়িয়ে গেছে। এর অন্যতম হলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি।
ফুটপাতের ওপর অবৈধ দোকান বসিয়ে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে। জানা যায়, এবারের ঈদে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে দ্বিগুণ, এমনকি কোথাও কোথাও তিনগুণ বেশি হারে চাঁদা আদায় করছে ‘লাইনম্যান’ নামধারী পাঁচ শতাধিক চাঁদাবাজ। মূলত কতিপয় পুলিশ সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতার আশীর্বাদে চলে এ চাঁদাবাজি।
দেশের প্রায় সর্বত্রই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে থাকলেও রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার চাঁদাবাজি উল্লেখ করার মতো।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ এবং ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী এ এলাকাটিকে চাঁদার হাট বানিয়ে ফেলেছে যেন। এই চাঁদাবাজি ব্যাপক আকার ধারণ করে ঈদ উৎসবের সময়।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ধকল কাটিয়ে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য যখন জমে উঠেছে, তখন বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আবারও মেতে উঠেছে চক্রগুলো। নিউমার্কেট এলাকায় শুধু ফুটপাত ও রাস্তায় পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে প্রায় ৭ হাজার হকার।
এদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলা হচ্ছে অন্তত ৫০ লাখ টাকা। চাঁদা তুলতে ২০ জন লাইনম্যানের তত্ত্বাবধানে অন্তত ১০০ জন পেশাদার চাঁদাবাজ এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চাঁদার অর্ধেক টাকা যায় স্থানীয় পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার পকেটে। আবার অন্যরকম উপার্জনও করছেন এ এলাকার অন্তত ১০টি মার্কেটের মালিক সমিতির নেতারা। তারা প্রায় এক হাজার অবৈধ দোকান বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
চাঁদাবাজি বন্ধ করা যাবে কীভাবে? হকার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরষের ভেতরেই লুকিয়ে আছে ভূত। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তাদের যোগসাজশেই বছরের পর বছর নির্বিঘ্নে প্রকাশ্যেই চলছে এই অপকর্ম। তারা আরও বলছেন, স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের কথা বলে লাইনম্যানরা প্রতিদিন প্রকাশ্যেই চাঁদা তোলেন, এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। সমঝোতার মাধ্যমেই চলছে চাঁদাবাজি।
আমাদের কথা হলো, তবে কি নিউমার্কেট এলাকার চাঁদাবাজি প্রতিষ্ঠিত অরাজকতা হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছে? আসলেই তাই। এই চাঁদাবাজি নিয়ে অসংখ্যবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে কি হকার ও ব্যবসায়ীদের কথাই ঠিক?
তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না। আমরাও একই কথা বলতে চাই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।
অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজির জন্য দায়ী মূলত রাজনীতির বর্তমান ধারা। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে কোনো দল ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমর্থিত বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। বলা বাহুল্য, এ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয় অস্ত্র ও পেশিশক্তি দ্বারা। এর ফলে আইনের শাসন হয় প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এসব দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে হবে শক্ত হাতে।