করোনা মহামারির সময় থেকে তীব্র কর্মী সংকটে পড়ে এশিয়ার বিজনেস জায়ান্ট সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের শ্রমশক্তির সবচেয়ে বড় অংশ পূরণ করে বাংলাদেশ ও ভারত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর থেকেই বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ-ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ সিঙ্গাপুরে শ্রমিক পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে বসে। বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রপ্তানি হতো সিঙ্গাপুরে।
কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে কর্মী গেছে মাত্র ১০ হাজার ৮৫ জন। আর গত বছর মে মাস পর্যন্ত গেছে ১২ হাজার ১৩৯ জন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকনির্ভর আবাসন ও শিল্প খাতের লোকসানের লাগাম টেনে ধরতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আইনগুলো শিথিল করে দেশটি। তবুও আশানুরূপ শ্রমিক না পেয়ে রোবটের দিকে ঝুঁকেছে সিঙ্গাপুরের শ্রম মন্ত্রণালয়।
সিঙ্গাপুরের নির্মাণশিল্পের তদারকি থেকে শুরু করে লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব—সব কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে রোবট। এক কোটিরও কম জনসংখ্যার দেশ সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির চাকা ঘোরে বিদেশি শ্রমশক্তির ওপর নির্ভর করে। প্রায় ১৫ লাখ বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর—এই ১০ মাসে শ্রমিকের সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় মাত্র দুই লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ জনে। এই কর্মী সংকটের সমাধানের জন্য তারা বেছে নিয়েছে রোবটিকস প্রযুক্তি।
মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোস্টন ডাইনামিকসের বানানো চার পাওয়ালা ‘স্পট’ নামের রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে নির্মাণশিল্পে। মাটি এবং পাথর স্ক্যান করে নির্মাণকাজের তদারকি করে ‘স্পট’ এবং সঙ্গে সঙ্গেই তারা সব ডাটা মূল প্রতিষ্ঠানের কন্ট্রোল রুমে পাঠিয়ে দেয়। করোনার আগে এই কাজের জন্য দুজন শ্রমিক লাগলেও এখন একটি রোবটই সেই কাজ বেশ ভালোভাবেই করতে পারে।
কারখানায়ও বর্তমানে কাজ করছে রোবট। ২০২১ সালের ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবটিকসের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে বেশিসংখ্যক রোবট শ্রমিক ব্যবহারের দিক থেকে সিঙ্গাপুরের অবস্থান দ্বিতীয়। সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কারখানায় প্রতি ১০ হাজার শ্রমিকের বদলে ৬০৫টি করে রোবট কাজ করছে। অন্যদিকে প্রথম অবস্থানে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির কারখানায় ব্যবহৃত রোবটের সংখ্যা ৯৩২।
সিঙ্গাপুর জাতীয় গ্রন্থাগারে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘সেলফ রিডিং রোবট’। প্রতিদিন এক লাখ বই স্ক্যান করা একটি মাত্র রোবটের কাছে ডালভাত। ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কর্মীর কাজটাও ভালোভাবেই শিখে নিয়েছে ‘রোবট বারিস্তা’। সিঙ্গাপুরের ৩০টিরও বেশি মেট্রো স্টেশনের কমিউটারগুলোতে বারিস্তা রোবট কফি বানিয়ে বিক্রি করছে। তবে সিঙ্গাপুরের বেশির ভাগ মানুষ চায় ভ্রাম্যমাণ কফি বিক্রয়কর্মীর দায়িত্ব রোবটের বদলে মানুষের ওপরই থাক। কারণ রোবটের কারণে নিম্নআয়ের অধিবাসীরা অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। বারিস্তা রোবট বানিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক রোবট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ক্রাউন ডিজিটাল’। ক্রাউন ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কেথ ট্যানের মতে, সিঙ্গাপুরের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্কিটে রোবট অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। তার পরও এই সার্কিটে মানুষের উপস্থিতিতেই কাজ করানো ভালো বলে মনে করেন তিনি।