মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে মিও উইন তুন ও তার ব্যাটেলিয়নকে পাঠানো হয়েছিল সেখানকার কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালানোর জন্য। ক্যামেরার সামনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ২০১৭ সালের সেই অভিযানের কথা বলছিলেন মিও। তিনি জানান, বার্মিজ সেনাদের রাখাইনে পাঠানো হয়েছিল সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটি ‘নিধনযজ্ঞ’ চালাতে। এই ঘটনার পরেই সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে চলে আসে।
মিও উইন তুন স্বীকার করেছেন যে, তিনি ৩০ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি নিহত রোহিঙ্গাদের মরদেহ গণকবর খুঁড়ে পুতে দেন। একজন নারীকে ধর্ষণের কথাও জানান তিনি। আরেক ভিডিওতে সেনা সদস্য জাও নাইং তুন জানান, তার ব্যাটেলিয়ন প্রায় ২০টি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে।
এর পথে যে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তার উর্ধতন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে। এই দুজনের বক্তব্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস জানিয়েছে, উভয়ে প্রায় ১৮০ রোহিঙ্গা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল।
৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিও উইন তুন ও জাও নাইং তুন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসিতে এই সাক্ষ্য দিয়েছে। আদালতটি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত করছে। কবে তাদেরকে জেরা করা হয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি। গত জুলাই মাসে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি তাদের এই স্বীকারোক্তি আদায় করে।
মিয়ানমার সরকার ২০১৭ সালে ১০ রোহিঙ্গা হত্যার দায়ে ৭ সেনা সদস্যকে অভিযুক্ত করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ উঠেছে দেশটির বিরুদ্ধে তা নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করেনি মিয়ানমার। এরমধ্যে ওই গণহত্যায় অংশ নেয়া দুই সেনাসদস্যদের এমন স্বীকারোক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জাও মিন তুন দাবি করেছেন, সেনাদের এমন দাবি মিথ্যা। তবে ব্যাটেলিয়ন স¤পর্কিত তথ্য যা তারা দিয়েছে তা সত্যি। এছাড়া, নিউ ইয়র্ক টাইমস স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা যে গণকবরের অবস্থান জানিয়েছিল এই সেনাদের স্বীকারোক্তির সঙ্গে তা পুরোপুরি মিল রয়েছে।
স্বীকারোক্তিতে ওই দুই সেনা জানিয়েছে, রাখাইনের বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা কমান্ডারদের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের হত্যার নির্দেশনা ছিল সেনা সদস্যদের ওপর। অর্থাৎ, এটিযে পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যা ছিল তা এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব হবে। রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় বার্মা রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের সদস্য তুন খুন বলেন, এই স্বীকারোক্তির পর মিয়ানমারে প্রধান জেনারেলরা বুঝতে পারবেন যে, তারা আর দায় এড়াতে পারবেন না।