নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবি আদায়ে বিএনপি’র চলমান রোডমার্চ কর্মসূচি আগামী ৫ই অক্টোবর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এসে শেষ হবে। এই কর্মসূচি ঘিরে উজ্জীবিত এখানকার নেতাকর্মীরা। এখান থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে পারে দলের হাইকমান্ড। আর চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শেষ সময়ের এই কর্মসূচি সফল করতে জোরেশোরে নেমেছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তবে কর্মসূচিকে ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যে রোডমার্চ সফলে প্রস্তুতি সভা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, বিএনপি’র কেন্দ্রঘোষিত এই রোডমার্চ আগামী ৫ই অক্টোবর কুমিল্লা থেকে শুরু হবে। এরপর এটি ফেনী, মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম নগরে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে। রোডমার্চে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট চারটি জনসভা হবে। সকাল ১০টায় প্রথম সভাটি হবে কুমিল্লায়। এই সভা শেষে রোডমার্চ রওনা হবে ফেনীর পথে।
বিজ্ঞাপনফেনীর মহিপালে হবে দ্বিতীয় জনসভা। তৃতীয়টি হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদরে। এরপর চট্টগ্রাম নগর বিএনপি’র কার্যালয় নাসিমন ভবন সংলগ্ন কাজীর দেউড়ি মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শেষ হবে।
প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের এই রোডমার্চে মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন তারা। এখন রোডমার্চ সফল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটকেও সাংগঠনিক চিঠি ও মৌখিক নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। থানা, ইউনিয়ন পর্যায়েও প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে সাধারণ মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে করা হয়েছে কয়েকটি সমন্বয় কমিটি।
সূত্রমতে, সরকারের শেষ পর্যায়ে এসে বড় এই কর্মসূচিকে ঘিরে দারুণভাবে উজ্জীবিত বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের এখানকার নেতাকর্মীরা। প্রস্তুতি সভা, সমন্বয় সভা, প্রচারপত্র বিলিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চালানো হচ্ছে প্রচারণা। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের অনেককেও এই প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগর কৃষক দলের নেতা আজম খান মানবজমিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম হচ্ছে আন্দোলনের সূতিকাগার। আর এখান থেকে আগামী ৫ তারিখ শীর্ষ নেতারা চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে আশা করছি।’
এদিকে রোডমার্চকে কেন্দ্র করে সংঘাতেরও আশঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যে মিরসরাই উপজেলায় গত শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রস্তুতি সভায় হামলা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে একপক্ষের আঘাতে রোমন নামে এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যু হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আর বিএনপি’র লোকজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।
জানা যায়, মিরসরাইয়ে নিহত দোকান কর্মচারী রোমনকে এখন নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ। এই ঘটনার জেরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। তবে বিএনপি’র দাবি, রোমনকে আওয়ামী লীগের লোকজনই হত্যা করেছে। আর রোমন কোনো রাজনীতি না করলেও তার পরিবার বিএনপি’র সমর্থক বলে দাবি করছে তারা। তবে ঘটনায় নিহত রোমনের বাবা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বলেন, ৫ই অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ সফল করতে গত শুক্রবার আমার বাড়িতে প্রস্তুতি সভা করেছি। সভা শেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ সময় দোকান কর্মচারী রোমন তাদের হামলার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছিলেন। এতে সন্ত্রাসীদের হামলায় মাথায় আঘাত পেয়ে পাশের পুকুরে পড়ে প্রাণ হারায় রোমন।
এদিকে রোডমার্চে প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন এই কর্মসূচি পালন কমিটির প্রধান ও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি। আর নয়। এখন রোডমার্চ কর্মসূচির জন্য প্রশাসন থেকে কোনো অনুমতি নেবো না। তবে অবহিত করবো। তবে বিএনপি’র প্রোগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ মানবজমিনকে বলেন, ‘এ রকম কোনো মেসেজ আপাতত আমাদের কাছে নেই। আমরা নতুন করে কোনো সংঘাত হবে না বলে আশা করছি। আর বিএনপি’র পক্ষ থেকে কর্মসূচির বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, এটি একটা গণতান্ত্রিক দেশ। তাই বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অবশ্যই অধিকার আছে। তবে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে প্রতিরোধ করা হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ আছে। এদিকে প্রোগ্রামের প্রস্তুতি ও সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম মানবজমিনকে বলেন, আমরা রোডমার্চ বাস্তবায়নে প্রায় সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নেতাকর্মীরা রোডমার্চে অংশ নিতে অধীর আগ্রহে বসে আছে। আওয়ামী লীগের অপশাসনে জর্জরিত জনতাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সরকারকে চূড়ান্তভাবে লাল কার্ড দিয়ে দেবেন। আর আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি পালন করতে চায়। তবে কোথাও বাধা দেয়া হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।