Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeলাইফস্টাইলরোজা অবস্থায় মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটি হলে করণীয়

রোজা অবস্থায় মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটি হলে করণীয়

রোজার সময় দিনের শেষভাগে মাথাব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। ইফতারের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে এ ব্যথা সেরে যায়। পরদিন আবার এ মাথাব্যথা ফিরে আসে। এতে রোজাদার বেশ কষ্টে দিনযাপন করেন। অতিরিক্ত ভাজা খাবার, কম পানি গ্রহণ, অপর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম, সেহরিতে খুব কম খাবার খেলে মাথাব্যথা হতে পারে। অ্যাসিডিটি থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। এ দুটি সমস্যা একই কারণে হতে পারে। একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক রয়েছে।

যারা ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কম পানি খেয়ে থাকেন তাদের সমস্যা বেশি হয়। বছরের অন্য সময় যেখানে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা প্রয়োজন, সেখানে রমজানে পানি পান করার পরিমাণ দাঁড়ায় এক লিটারে। এতে মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটি হতে পারে। এখন খুব ঠান্ডা পানি বা শরবত না খেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি বা শরবত খাওয়া উচিত। দুধ কিন্তু পানির বিকল্প নয়।

অনেকে সেহরিতে খুব কম খান অথবা একেবারেই খান না। তাদেরও এ দুটি সমস্যা হয়। শরীরের চাহিদা মতো বছরের বাকি এগারো মাসে সমপরিমাণ খাবারই ইফতার-সন্ধ্যারাত ও সেহরিতে ভাগ ভাগ করে খেতে হবে। খাওয়া কম নয় আবার বেশিও নয়। ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত গুরুপাক খাবার যেমন-বেশি মসলাদার মাংসের রোস্ট, কাবাব, রেজালা, বিরিয়ানি খেলেও মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটি হতে পারে। অনেকে রোজা রেখে বেশি ঝাল দিয়ে ভর্তা-আচার খেতে পছন্দ করেন। এতেও অ্যাসিডিটির আশঙ্কা থাকে। খেতে হবে স্বাভাবিক খাবার।

দোকানের তৈরি তেলে ভাজা খাবারেও অ্যাসিডিটি হয়। এর কারণ নিুমানের তেল। একই তেলে বারবার ভাজা হয়, আবার যে খাবারটি ভাজা হচ্ছে সেটা একেবারে শক্ত করে ফেলা হয়। যা হজম করা কষ্টসাধ্য। বাইরের কাটা ফল, জুস, শরবত যতটা সম্ভব না খাওয়া ভালো। মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটির জন্য বাদ দিতে হবে চকলেট, পাস্তা, ডুবো তেলে কড়া ভাজা, টেস্টিং সল্ট, সয়াসস, কফি, কড়া চা, জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার। বাসি খাবারে অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়।

রমজানে প্রতিদিনই আদা-পুদিনা, গোলমরিচ খেলে ভালো হয়। আদা-পুদিনা পাতা দিয়ে কাঁচা ছোলা খাওয়া যায়। যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা সিদ্ধ ছোলা ভুনা না করে এর মধ্যে শসা, টমেটো, সরিষার তেল দিয়ে মেখে খেতে পারেন। আবার আদা-লেবু-কালোজিরা দিয়ে হালকা লাল চা খেলে ভালো হয়। তেঁতুলের পাতলা রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেলে পটাশিয়ামের জন্য শরীর ঠান্ডা থাকে। এতে মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটি দুটিই দূর হয়। এ সময় ঠান্ডা সালাদ খেলেও ভালো হয়। ফলে সালাদও উপকারী।

মুরগি বা অন্য কোনো মাংস পাতলা করে কেটে হালকা মসলা দিয়ে রান্না করলে হজমে সমস্যা হয় না। যেসব খাবারে অ্যাসিডিটি হয়, সেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যাদের দুধে সমস্যা হয় তাদের দই, পনির, ছানা, ঘোল খেলে তেমন অসুবিধে হয় না। টক দইয়ে প্রোবায়টিক আছে বলে এটি হজমকারক।

দেখা যায়, রাইবোফ্লাভিন বা ভিটামিন বি২, নায়াসিন ও ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে মাথাব্যথা হতে পারে। এ জন্য খেতে হবে-দুধ বা দই, কলিজা, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, মাছ, ডিম, মটর, চর্বি ছাড়া মাংস, গোটা শস্য, কাঠবাদাম, বাদাম, পোলট্রি, অ্যাভোকাডো, খেজুর, কিসমিস, ডুমুর, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, পাকা কলা, সয়াবিন ইত্যাদি।

অনেকে রোজার দিনে রাতে জেগে থাকেন। এতেও মাথাব্যথা হতে পারে। এজন্য দিনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে ভালো হয়। রোজা রেখে এমন খাবার খাওয়া উচিত, যাতে সহজে হজম হয় এবং শরীর ঠান্ডা থাকে। তাহলে মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments