Wednesday, October 4, 2023
spot_img
Homeধর্মরোজার উদ্দেশ্য কী?

রোজার উদ্দেশ্য কী?

যথাযথ উদ্দেশ্যে যদি রোজা হয়, তাহলে তা দুনিয়াতে যেমন মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে, আখেরাতেও তেমনই দোজখ থেকে রক্ষাকারী ঢাল হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

তো রোজার উদ্দেশ্য কী? রোজার উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির ভেতর এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হওয়া যে, তিনি নিজেই তার ভেতরগত চাহিদায় মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। 

এ বিষয়টিকে আল্লাহর রাসুল (সা) তার এক হাদিসের মাধ্যমে এভাবে তুলে ধরেছেন: কোনো রোজাদারকে কখনো গালি দেওয়া হলে রোজাদার ব্যক্তি উত্তরে রাগ না দেখিয়ে যদি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক), আমি একজন রোজাদার।’ যিনি এমন করেন, তার উত্তরে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা একজনের মন্দ কাজের বিপরীতে রোজার আশ্রয় নিয়েছে। আমিও তাকে দোজখের আগুন থেকে হেফাজত করেছি।’ (তারতিবুল আমালি আল–খামসিয়্যা লিসশাজরি, হাদিস নম্বর: ১৩৪৮। 

এই হাদিস থেকে জানা যায়, রোজা মানুষকে নেতিবাচক মানসিকতা থেকে রক্ষা করে এবং ইতিবাচক মানসিকতাকে লালন পালন করে। রোজা ব্যক্তির ভেতর এমন নমনীয় অবস্থার তৈরি করে যে, কারো উসকানিতে রোজাদার ব্যক্তি ক্ষেপে উঠেন না। অন্যের দিক থেকে খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলে তিনি ভালো ব্যবহার করেন। কেউ গালি দিলেও তিনি কোমল আচরণ করেন। 

রোজা ব্যক্তির ভেতর এই সংকল্প জাগিয়ে তোলে যে, তিনি তার শত্রুর জন্যও প্রার্থনা করেন। যে ব্যক্তি তার সঙ্গে মন্দ আচরণ করে রোজাদার ব্যক্তি তার মঙ্গলের জন্যও প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করেন।

আরও একটি হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন: রোজা শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করার নাম নয়; আসলে রোজা হলো, অশ্লীল ও অনর্থক কথাবার্তা পরিত্যাগ করার নামও (সহি ইবনু খোযায়মা, হাদিস নম্বর: ১৯৯৬)।

কোনো ব্যক্তি যদি বাহ্যিক দিক দিয়ে রোজা রাখেন এবং রোজা অবস্থায় মিথ্যা বলেন, গালি দেন, গিবত করেন, শত্রুতা করেন, কাউকে অপমান করার মতো শব্দ ব্যবহার করেন, তাহলে এই ধরনের কাজে জড়িত থাকা ব্যক্তি সত্যিকারের রোজাদার নন। হাদিসের ভাষায় এই ধরনের ব্যক্তি যেন এমন রোজাদার, যিনি হালাল জিনিসের মাধ্যমে রোজা রাখলেন বটে কিন্তু আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ জিনিসের মাধ্যমে যেন রোজা ভেঙে ফেললেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর : ২৩৬৫৩)।

একই ধরনের আরও একটি হাদিস মুসনাদে আহমাদে এসেছে। এই হাদিস মতে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : রোজা একটি ঢাল। সুতরাং তোমাদের মধ্য হতে কেউ রোজাদার হলে তিনি যেন অশ্লীল কথা না বলেন এবং হৈচৈ না করেন। কেউ তাকে মন্দ কথা বললে বা ঝগড়া বাঁধালে তিনি যেন বলে দেন, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর: ৮০৫৯)।

এটাকেই আমি রোজার উদ্দেশ্য কথা বলেছি। এই দুনিয়ায় মুসলমানের আচার–ব্যবহার প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ার নয়। একজন বিশ্বাসীর জন্য উচিত নয় যে, কারো উসকানিতে রেগে গিয়ে লড়তে শুরু করবেন। 

ভাষা ও আচরণ দিয়ে একজন মুমিনের এই কথা জানান দেওয়া উচিত যে, আমি আপনার চেয়ে ভিন্ন মানুষ। আমি একজন রোজাদার মানুষ। নিজেকে খোদার মর্জির অনুগামী করে রেখেছি। আপনার মতো স্বাধীন নই যে যা ইচ্ছা করা শুরু করব।

রমজানে দিনের বেলা খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকা বা রোজা রাখা যেন এই কাজেরই বাস্তব শিক্ষা। মানুষের ভেতর এই রোজার স্পিরিট জাগিয়ে তোলার একটি কৌশল। খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা মানুষের জন্য অনিবার্য একটি বিষয়। 

খাদ্য ও পানীয় হলো একমাত্র শেষ বিষয় যা দিয়ে মানুষকে ঠেকানো যায়। মানুষকে তার অনিবার্য প্রয়োজনীয় বস্তু থেকে বিরত রাখা যেন চূড়ান্তভাবে এই শিক্ষা দেওয়া যে, আল্লাহ আপনাকে যেসব জিনিস থেকে বিরত রেখেছেন তা থেকে সর্বাবস্থায় আপনাকে তা থেকে বিরত থাকতে হবে, আপনার স্বাদ–আহ্লাদ বা অভ্যস্থতার জন্য তা যত কঠিনই হোক না কেন। এমনকি এই নিষিদ্ধ বস্তুর তালিকা আপনার জীবনের অপরিহার্য বস্তু পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও তা মানতে হবে। 

রোজা যেন নিজের ইচ্ছার উপর তালা লাগানোর অনুশীলন। রমজান মাসে এই অনুশীলনের চূড়ান্তটা করানো হয়। একজন মানুষকে পানাহারের মতো জরুরি বিষয় থেকে বিরত রাখা হয়। 

খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা একজন মানুষের জন্য সম্পূর্ণ বৈধ। কিন্তু রোজার দিনে এই জরুরি বিষয়টিতেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যেন বর্তমান দুনিয়ায় যে বিধিনিষেধের জীবন মানুষ কাটাচ্ছে তার পূর্ণ উপলব্ধি ঘটানো সম্ভব হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments