দেশের সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ বহু পুরোনো।
এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ঘুস না দিলে সেবা পাওয়া যায় না; ভূমি রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তিতে পদে পদে দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে এক্ষেত্রে রাজধানীর তেজগাঁও রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্স বোধহয় সব অনিয়ম ছাপিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার যুগান্তরে এ সংক্রান্ত এক সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ কমপ্লেক্সে প্রকাশ্যেই চলছে ঘুসের লেনদেন, নেই কোনো রাখঢাক। ঘাটে ঘাটে বাঁধা রয়েছে ঘুসের রেট।
ঘুসের কারবার চলে আসছে অনেকটা সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো। দিনশেষে ঘুসের টাকা বণ্টন হয় অটোপদ্ধতিতে। জানা যায়, এ কমপ্লেক্সে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ দলিল রেজিস্ট্রি হয়; আর এসব দলিল রেজিস্ট্রি করতে দৈনিক আদায়কৃত ঘুসের অঙ্ক কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা। এই বিপুল অঙ্কের ঘুস প্রদানের জন্য গড়ে উঠেছে নেটওয়ার্ক। এর বাইরেও জমিসংক্রান্ত আরও নানা কাজ রয়েছে। সেসব ক্ষেত্রেও চলে জাল-জালিয়াতি-ঘুস লেনদেন।
যেমন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন নিষিদ্ধ হলেও ঘুস দিলে তাও ‘বৈধ’ করে দেওয়া হয়। ভলিউম ঘষামাজা করে পরিবর্তন, এমনকি পুরো ভলিউম গায়েব করে ফেলা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে তেজগাঁও রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সকে বলা যেতে পারে ‘ঘুসের স্বর্গরাজ্য’। আমরা মনে করি, ভূমি নিয়ে এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত এদিকে অবিলম্বে দৃষ্টি দেওয়া।
ভূমি খাত হলো দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিপ্রবণ খাতগুলোর একটি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমির দলিল রেজিস্ট্রেশনে, নকলনবিস থেকে মোহরার পদে যোগদানে, মোহরার থেকে সহকারী পদে যেতে, দলিল লেখকের লাইসেন্স পেতে বিপুল অঙ্কের অবৈধ লেনদেন চলে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে সাবরেজিস্ট্রার হিসাবে বদলি হতে হলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুস দিতে হয়। এর বাইরে ভূমি অফিসে সেবা পেতে আসা মানুষদের দলিলের নকল তোলা, নামজারি, হালনাগাদ তথ্য পাওয়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দিতে হয় অফিসভেদে সুনির্দিষ্ট পরিমাণের ঘুস। দ্রুত কাজ হাসিলের জন্যও গুনতে হয় বাড়তি টাকা। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আশার কথা, সরকার ভূমি ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ্ডসহ গোটা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি ও রেকর্ড অব রাইটস (আরওআর) সমন্বিতভাবে সম্পন্ন হবে। জমি রেজিস্ট্রেশনের অল্পদিনের মধ্যেই নামজারি করা সম্ভব হবে। এর ফলে একজনের জমি আরেকজন রেজিস্ট্রি করতে পারবে না। ফলে বন্ধ হবে হয়রানি ও প্রতারণা। এতে কমে আসবে জমিসংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা। তাছাড়া ভূমি খাতে দুর্নীতির সুযোগও কমে যাবে। তবে দেশব্যাপী এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ভূমি রেজিস্ট্রেশনসহ জমিসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ডে দুর্নীতি-হয়রানির সুযোগ থেকেই যাবে।