পাবনায় নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চুরির ঘটনা ঘটছে। প্রকল্পের ভেতর পদ্মার পাশে পানিপথে মালামাল ওঠানামার জন্য দুটি লেইভার ক্রেন থেকে বৈদ্যুতিক কেবল চুরি হয়েছে। প্রকল্পে বিশেষ কাজের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ১২৬ চাকাবিশিষ্ট ক্রেন থেকে চুরি হওয়া এ কেবলের মূল্য প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। আরও জানা গেছে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেবলগুলো যথাস্থানে রাখা ছিল; কিন্তু ৯ জানুয়ারি লেইভার ক্রেন দুটির যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় ২৬৫ মিটার দীর্ঘ কেবল আর পাওয়া যায়নি। ফলে রূপপুর প্রকল্পের জন্য নির্মিত জেটিতে মালামাল ওঠানামা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ওদিকে ২৭ ডিসেম্বর রাতে রূপপুর প্রকল্প থেকে ট্রাকে ৯ টন লোহা পাচারের সময় ৫ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এর আগেও কয়েক দফা এ ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রূপপুর প্রকল্পে এত নিরাপত্তা বলয় থাকা সত্ত্বেও বারবার কেন চুরির ঘটনা ঘটছে? এ প্রকল্পে সরকারি অনেক সংস্থা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিটি সাব-কন্ট্রাক্টরের নিজস্ব সিকিউরিটির ব্যবস্থা রয়েছে। সন্দেহের ব্যাপার বটে, বিপুল অঙ্কের টাকার মালামাল চুরি হলেও প্রকল্পের অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে কি চুরির ঘটনার সঙ্গে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোনো যোগসাজশ রয়েছে? চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে বটে, তবে তা ঘটনা ঘটার অনেক পরে। মামলার অগ্রগতি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, চুরির ঘটনার ২০-২৫ দিন পর মামলা হয়েছে, অর্থাৎ মামলা করতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পুরো বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করি আমরা। দেরিতে মামলা হলেও কেবল চুরির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্তে যারাই অভিযুক্ত হবেন, তাদের দাঁড় করাতে হবে বিচারের মুখোমুখি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের একটি মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পের বালিশকাণ্ড এক সময় লোকের মুখে মুখে ফিরছিল। ওই মেগা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চুরির ঘটনা। আমাদের বক্তব্য হলো, কোনো প্রকল্পেই কোনো ধরনের দুর্নীতি কিংবা চুরির ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। দুর্নীতিমুক্ত অবস্থায় স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।