Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকরাশিয়ার তেলে সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা দিতে ব্যর্থ ইউরোপ

রাশিয়ার তেলে সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা দিতে ব্যর্থ ইউরোপ

প্রতিদিন ১০০ কোটি ডলার আয় করছে মস্কো ফের অস্থির তেলের বাজার, বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি

রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে স্থায়ী চুক্তি খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা বর্তমানে বিবাদে রয়েছেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা একমত হয়েছেন। এর ফলে সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে ইউরোপে তেল আমদানি বন্ধ হবে। কিন্তু পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনা আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। ইইউ নেতাদের এ সিদ্ধান্তে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার বেড়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল সোমবার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে অক্ষমতার অর্থ হল রাশিয়া এখনও ইউরোপীয় দেশগুলোতে তেল এবং গ্যাস বিক্রি থেকে প্রতিদিন ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, তেলের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ইউরোপের অনেক দেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। সম্পূর্ণ তেল নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একমত হতে অস্বীকার করা দেশগুলোর মধ্যে একটি হল হাঙ্গেরি। তারা একটি সাধারণ বার্তা দিয়েছে যে, তারা অন্য কোনো জায়গা থেকে এত সহজে ও সস্তায় তেল পাবে না। সেøাভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

অচলাবস্থা ভাঙতে ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাব করেছিল যে, এ নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাশিয়ান তেলের জন্য প্রযোজ্য যা ট্যাঙ্কার দ্বারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে আনা হয়, হাঙ্গেরি, সেøাভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য রাশিয়ান দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে তাদের রাশিয়ান তেল গ্রহণ চালিয়ে যেতে পারে যতক্ষণ না বিকল্প সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে যে তেল আমদানি করে তার দুই-তৃতীয়াংশ আসে সমুদ্রপথে। ধাপে ধাপে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে এ বছরের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। যার মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের তাদের লক্ষ্য অর্জন করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা তাদের ওপর কোন প্রভাবই ফেলতে পারবে না।
ইউরোপেও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করার বিষয়টিতে অনেক দেশ একমত হতে পারছে না। অন্যান্য জিনিসের মতো জ্বালানীর মূল্যও বেশ উর্ধ্বমুখি। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কায় ইচ্ছে থাকলেও রাশিয়ার তেলের ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দেবার বিষয়টিতে থেকে সরে এসেছে ইউরোপীয় দেশগুলো।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা আরো বিস্তৃত হবার সুযোগ ছিল। কারণ, জার্মানি এবং পোল্যান্ড এ বছরের মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ধীরে ধীরে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আমদানি বন্ধ করে দিতে স্বেচ্ছায় সম্মত হয়েছে। হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক এবং সেøাভাকিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এর ফলে বাকি থাকবে ১০ থেকে ১১ শতাংশ। ব্রাসেলসের বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বেশ কঠোর অবস্থান নেন। তিনি বলেন, জ্বালানি সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘আগে আমাদের সমাধান দরকার, তারপর নিষেধাজ্ঞা,’ বলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী।

ফের অস্থির তেলের বাজার, বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি : এদিকে, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা একমত হওয়ার পরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ আরো মুদ্রাস্ফীতির চাপে পড়বে। একটি পারিবারিক গাড়িতে ভর্তির খরচ সপ্তাহান্তে প্রথমবারের মতো ১০০ পাউন্ড অতিক্রম করেছে। তেল বিনিয়োগকারীরা ইক্যুইটির দামে লাভবান হচ্ছেন এবং শহরের ব্যবসায়ীরা খারাপ পরিস্থিতি আরো খারাপ করার জন্য আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ব্রেন্ট ক্রুডের একটি ব্যারেল গতকাল ১২৩ ডলারে পৌঁছেছে- যা সোমবার ছিল প্রায় ১২১ ডলার।

বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ২০ বছরের জন্য দ্রুত গতিতে সুদের হার বাড়াচ্ছে। যদিও লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, সমালোচকরা বলছেন যে, ব্যাঙ্কাররা বক্ররেখার পেছনে রয়েছে এবং সতর্ক করে যে, উচ্চতর ঋণ নেয়ার খরচ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আঘাত করতে পারে। প্রিমিয়ার মিটন ইনভেস্টরস-এর ডানকান গুডউইন বলেছেন, ‘জ্বালানির পাশাপাশি, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি একজন গড় ভোক্তার নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের ওপর বস্তুগত প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা আশঙ্কা করি আগামী ৬ মাস ধরে খাদ্যের দাম বেশি থাকবে। উচ্চ মূল্যের জন্য সরবরাহের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে সময় লাগতে পারে।

রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা জ্বালানির দামের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে মুদ্রাস্ফীতি নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানিকৃত তেলের ২৬ শতাংশ এবং গ্যাসের ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে। এর বিনিময়ে ইইউ রাশিয়াকে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি ইউরো প্রদান করে। সূত্র : এপি, রিপলস নাইজেরিয়া, ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments