সময় বাড়ানো হলেও রাজধানীর লক্কড়ঝক্কড় বাস মেরামত নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিবহণ শ্রমিকরা বলছেন, মালিকরা বাসগুলো মেরামত করতে চান না এবং অভিযান শুরু হলে তারা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবেন না। এতে দুর্ভোগের শিকার হবেন যাত্রীরা। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও কেন সুফল মিলছে না, এটি এক প্রশ্ন। জানা যায়, সম্প্রতি এক সভায় রাজধানীর সড়কে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করার বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) আশ্বাস দেন বাস মালিকরা। তারা এসব গাড়ি সারাতে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সময় চান। সম্প্রতি এক গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিআরটিএ আরও এক মাস বাড়িয়ে ১ জুলাই থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। জানা যায়, বিআরটিএ’র ঘোষণার পর এ পর্যন্ত খুব কমসংখ্যক যানবাহন মেরামত করা হয়েছে।
লক্ষ করা গেছে, যখনই পরিবহণ খাতে অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগ নেয় প্রশাসন, তখনই মালিক-শ্রমিকরা ভেদাভেদ ভুলে একাট্টা হন। তারা রাস্তায় গাড়ি না নামিয়ে শুরু করেন অঘোষিত ধর্মঘট। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এবারও কি এমনটাই হতে যাচ্ছে? অতীতে লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তেমন একটা সুফল মেলেনি। ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, নানা বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এসব তৎপরতা সত্ত্বেও সুফল যে মিলছে না, তা-ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতেই স্পষ্ট। এই ইঁদুর-বিড়াল খেলা আর কতকাল চলবে? ফিটনেসবিহীন যানবাহনে চলাচল করাটাই কি রাজধানীবাসীর নিয়তি?
দেশে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান প্রক্রিয়া কতটা ত্রুটিমুক্ত, বিশেষজ্ঞরা এ প্রশ্ন তুলেছেন বারবার। ফিটনেস প্রদান প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত না করে এ বিষয়ে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, তা কতটা সুফল বয়ে আনবে সেটাও এক প্রশ্ন। যেহেতু যানবাহনের ফিটনেসের সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের বিষয়টি জড়িত, সেহেতু শর্ষের ভেতর যাতে ভূত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ সড়কের লক্ষ্য বাস্তবায়নে অতীতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর সুফল কেন মেলেনি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায়গুলো চিহ্নিত, কী করণীয় তা-ও আলোচিত। সড়ককে নিরাপদ করার জন্য যা যা করণীয়, এর সবই করতে হবে। দুর্নীতি জিইয়ে রেখে সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, তাতে যে সুফল মিলবে না, তা বলাই বাহুল্য।