Saturday, April 1, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামরাজধানীর মার্কেটে চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তদের নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ নিন

রাজধানীর মার্কেটে চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তদের নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ নিন

ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন একাধিক মার্কেটে কথিত ‘তিন টেক্কা বাহিনী’ কোটি টাকা চাঁদা তোলার টার্গেট নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে গতকাল যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

জানা যায়, এ বাহিনীর দাপটে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কে কেউ কেউ মার্কেট ছাড়ছেন। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে এ ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আর এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছারও প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি। কেননা অধিকাংশ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর ছত্রছায়ায়। কাজেই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নির্মূলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা

ব্যতীত শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, তা বলাই বাহুল্য।

দুঃখজনক হলো, কেবল বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়; অথবা বিষয়টি কোনো একটি জেলা বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বস্তুত অবৈধ চাঁদাবাজির শেকড় দেশজুড়ে বিস্তৃত। পরিবহণ সেক্টরে চাঁদাবাজির কারণে রাস্তায় চলাচলকারী অগণিত যাত্রী প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে নানারকম প্রতিবন্ধকতা। চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন বাস কোম্পানি, ব্যক্তি, সংগঠন ও সমিতির নামে টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্টপেজ থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা উঠানো হচ্ছে।

জানা যায়, রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহণগুলোর মধ্যে কেবল বাস থেকেই প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগেও ব্যাপক চাঁদাবাজির সংবাদ সর্বজনবিদিত। বস্তুত রাজধানীসহ সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরিবহণে চাঁদাবাজি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

কয়েকদিন আগে সড়কের চাঁদাবাজিকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাণিজ্যমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। এ ঘটনা থেকে আঁচ করা যায়, দেশে চাঁদাবাজির ঘটনা কী প্রকট আকার ধারণ করেছে।

অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজির জন্য দায়ী মূলত রাজনীতির বর্তমান ধারা। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে কোনো দল ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমর্থিত বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

বলা বাহুল্য, এ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয় অস্ত্র ও পেশিশক্তি দ্বারা। মূলত শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হচ্ছে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা লাঘবে যত্নবান হওয়া। হতাশার বিষয় হলো, দেশের কোথাও এ চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না; বরং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আমরা মনে করি, রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটগুলোয় চাঁদাবাজি ও ব্যবসায়ীদের হয়রানির ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে শাসনব্যবস্থা ও আইনের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়। রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটগুলোয় চাঁদাবাজি ও ব্যবসায়ী হয়রানির ঘটনাকে লঘু অপরাধ হিসাবে গণ্য করে দুর্বৃত্তদের আধিপত্যকে উৎসাহিত করা মোটেই উচিত হবে না। সরকার রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে সব ধরনের চাঁদাবাজি নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments