রাজধানী ঢাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ছয় বছর আগে শুরু করা ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঢাকা ওয়াসা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির কাজ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাস্তবায়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাজস্ব আয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নের ফলে পুরো শহরের মানুষের সুপেয় পানি পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব পাইপ দিয়ে ঢাকায় সরবরাহ করা পানি ফুটানোসহ বিশুদ্ধকরণ করতে নাগরিকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। এই ব্যয় প্রতিদিন ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি টাকা। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি নেটওয়ার্কিং প্রকল্প। পানির উৎসের উন্নয়নের মাধ্যমে সুপেয় পানির বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। পানির উৎসের উন্নয়ন না হলে এ প্রকল্পের আওতায় যে পানি সরবরাহ করা হবে, তা নিরাপদ হবে না।
প্রশ্ন হলো, প্রকল্প গ্রহণের আগেই কেন সম্ভাব্য এ সমস্যা চিহ্নিত করা হয়নি? জানা গেছে, দীর্ঘ সময়েও খনন কাজের জটিলতা নিয়ে ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশন কোনো সমাধানে আসতে পারেনি। এটি খুবই পরিতাপের বিষয়। কারণ ২০১৬ সালে ৩ হাজার ১৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ ইতোমধ্যে দুবার বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি এখন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। তবে বর্ধিত এ মেয়াদের মধ্যেও কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ। উল্লেখ্য, গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। এদিকে পানির উৎসের সমস্যা দূর করা না গেলে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও এর কোনো সুফল পাবে না নগরবাসী। কাজেই এ সমস্যা দূর করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক সরবরাহকৃত পানি সুপেয় না হওয়ায় রাজধানীবাসীকে পানি ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধকরণের মাধ্যমে তা পান করতে হয়। বছর তিনেক আগে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক রাজধানীতে সরবরাহকৃত পানি ৯১ শতাংশ গ্রাহকই ফুটিয়ে পান করেন। পানি ফোটানোর এ প্রক্রিয়ায় রাজধানীর বাসাবাড়িতে বছরে পুড়ছে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস, অর্থাৎ এতে ব্যয় হচ্ছে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ঢাকায় সরবরাহকৃত ওয়াসার পানির যখন এই অবস্থা, তখন এ তথ্য উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, বিশ্বের অনেক দেশেই ট্যাপের পানি না ফুটিয়েই পান করা যায়। এমনকি এশিয়ারই অনেক দেশে ট্যাপের পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোনোভাবে বিশুদ্ধ করার প্রয়োজন পড়ে না। বিপরীতে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, এই পানি অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত। কাজেই রাজধানীতে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে উল্লিখিত প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবেন সংশ্লিষ্টরা, এটাই কাম্য।