উড়িয়ে দিলাম প্রণয়ের লাল দোপাট্টা
তুমি যতন করে রেখে দিও
নিশির শিশির যখন ঝরে পড়ে
আঁখি পল্লবে
বুকের জমিনে আঁকা না বলা আল্পনা
ক্ষয়ে ক্ষয়ে বয়ে চলা
অবিনাশী মন
এই হলুদ জীবনের প্রাণহীন অবয়ব
ক্যাম্পাসে আঁকা বেওয়ারিশ লেভিস আটখানা আহ্লাদে মুখ
কোনো কিছু যখন কাটে না দাগ
তোমার স্মৃতির জমিনে,
বুকের বামপাশে বাসা বাঁধা গাভিন মনও যখন
বেহিসাবি চাওয়া-পাওয়ায় ব্যস্ত
পৌষের পৌষালি হাওয়া যখন উড়ে বেড়ায়
তোমার শহরের চৌকাঠে;
মনে করে, পরে নিও প্রিয়া, যত্নে কেনা সেই
মিহিন সুতার লাল দোপাট্টা।
এই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা জীবনের বাঁকে
কতকিছু এলো-গেলো
কত জল, কত কাজল
আঁকলো চোখে বেশুমার নীরবতা
কত মেঘ ঝরলো কপোলের ভাঁজে
কত বাঁশি বাজলো হিজল বনে;
সকাল আর সাজে
নীল খামে লেখা অগণিত চিঠি!
স্মৃতির স্তূপে হারানো নাবালক প্রেম;
অন্ধের বেশুমার চাওয়া-পাওয়ার
অযাচিত আদিখ্যেতা
বটতলায় বিপুল ডাক্তারের
সর্ব রোগের চিকিৎসা
এসব ছাপিয়ে;
তোমার বেনিতোলা চুলের ফাঁকে আঁটকে থাকা;
আহ্লাদে আটখানা সরস বিকেলে
বুকে জড়িয়ে নিও প্রিয়া
হিরন্ময় স্বপ্নে কেনা লাল দোপাট্টা।
সব পেয়েও যাদের আরও পাবার নেশা
পৃথিবীর সব চাই জলে আর স্থলে;
আবার কারো বুকপকেট হাহাকার করে!
জোটে না একটি আধুলিও দিনশেষে;
রেলের পরিত্যক্ত কামরায়;
কিংবা ফুটপাত, ফেলে রাখা টায়ার
ম্যানহোলে দিনাতিপাত,
মোড়ের দোকান থেকে কুড়োনো কাগজ,
পানির বোতল বেঁচে জোটে না যাদের এক বেলাও আহার;
জীবনের দামে যারা জীবন কেনে,
পথে আর প্রান্তরে শরীরের ঘামে
মিলে-মিশে একাকার মানব সভ্যতা
তোমার ঠোঁটের বাঁকে হারিয়ে যাওয়া!
আমার সে ভালোবাসা অনিকেত
এই উদ্বাস্তু যাযাবর জীবন!
আমার ছুটে চলা বেদুইন মন;
ঘুরে-ফিরে স্বপ্ন বেচে
শ্রাবণের এই বেরসিক মেঘলা রাতে;
একলা আমি
একলা পৃথিবী
মনে মনে ভাবি
পড়েছো কি তুমি প্রিয়া?
হৃদয় হাট থেকে কেনা
প্রিয় লাল দোপাট্টা!