বস্তুগত জীবনের ভেতরে কায়াহীন জগতের অস্তিত্ব আমাদের তাড়া করে রহস্যের হাতছানিতে। হোয়াইট হাউস নিয়ে অদ্ভুত কাহিনি শোনা যায়। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ভবন সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, অশরীরী গিজগিজ করছে! সুইডেনের রানির বিশ্বাস তাঁর প্রাসাদে অশরীরীর আনাগোনা। কথিত আছে, চার্লস ডিকেন্সের অসমাপ্ত রহস্যোপন্যাস The Mystery of Edwin Drood সম্পন্ন হয়েছে কোনো এক অশরীরীর হাতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’সহ বিভূতিভূষণ, নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখায় অদেখা ভুবনের বাসিন্দাদের অস্তিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে অশরীরীর অস্তিত্ব জনশ্রুতি, গল্প-গীতের যত্নে বেঁচে আছে নানা নামে—ডাইনি, পেত্নী, শাঁকচুন্নি, মেছো ভূত, দেও, দানব, দানো, পিশাচ…!
ইসলামে অদৃশ্য শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত ‘জিনের অস্তিত্ব’। এটি অস্বীকার করা ঈমানের পরিপন্থী। সুরা নাসে আছে ‘মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস’। সুরা জারিয়াতে আছে, ‘ওয়া মা খালাকতুল জিন্না ওয়ান নাসি ইল্লা লি-ইয়াবুদুন’। অর্থাৎ আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদত করার জন্য। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)
কাবাঘরের অদূরবর্তী ‘মসজিদে জিন’ আছে। এখানেই জিন জাতি প্রিয়নবী (সা.)-এর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন শুনে তাঁর প্রতি ঈমান আনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তারা (বলাবলি করল) আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি, যা সঠিক ও নির্ভুল পথ প্রদর্শন করে। তাই আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি…।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১-২)
জিন শব্দের অর্থ গোপন, গোপনীয়, গুপ্ত। আরবিতে জুনুন, জুন্নুন, মাজনুন শব্দ দ্বারা পাগল, পাগলামি বোঝায়। শব্দগুলোর উৎপত্তি জিন শব্দ থেকে। এ জন্য জিনগ্রস্তকে মাজনুন বা পাগল বলা হয়। জিনরা আগুনের তৈরি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন সৃষ্টি করেছি প্রখর আগুন দিয়ে।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২৭)
মানব সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে জিনের সৃষ্টি। দুষ্ট প্রকৃতির জিনগুলো হলো শয়তান। আরবি ‘ইতরিফ’ অর্থ ভূত। শয়তান জিনদের মধ্যে যারা দুরন্ত স্বভাবের ওদের বলা হয় ‘ইতরিফ’। হাদিসের বর্ণনা থেকে ধারণা পাওয়া যায়, জিন তিন প্রকার :
ক. এক ধরনের জিন উড়তে পারে, এদের পাখা আছে।
খ. আরেক ধরনের জিন সাপ, মাকড়সা ও পোকামাকড়ের রূপ ধরে থাকে।
গ. অন্য এক ধরনের জিন সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে চলাচল করে। এদের চেনা ও বোঝা কঠিন।
মদিনার অদূরে ‘ওয়াদিউল জিন’ বা জিনের দেশে একটি নির্জন পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। ‘ওয়াদিউল জিন’ এলাকার বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হলো এখানে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে গেলেও গাড়ি আপনা-আপনি কখনো সামনের দিকে, কখনো পেছনের দিকে চলতে থাকে। এটাও কি কেবল ম্যাগনেটিক রিঅ্যাকশন না মহান আল্লাহর লীলাখেলা? পবিত্র কোরআনের ভাষায়, ‘অদৃশ্যের চাবি তো মহান আল্লাহর হাতেই।’
লেখক : সহকারী অধ্যাপক
কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর।