৯৯ শতাংশ মুসলমানের দেশ তিউনিসিয়ায় ইসলাম পৌঁছেছিল হিজরি সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর আমলেই। আর মুসলিম শাসনাধীন হয় উমাইয়া খেলাফতের সময়। মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির লীলাভূমি তিউনিসিয়া ভিন্ন রূপ ধারণ করে পবিত্র রমজানে। তিউনিসিয়ার মুসলিমরা রমজানকে স্বাগত জানায় ধর্মীয় অনুশাসন, আচার-অনুষ্ঠান ও বর্ণিল আয়োজনে।
বিজ্ঞাপনরমজান এলেই যেন জেগে ওঠে মুসলিম তিউনিসিয়া। সারা বছরের আড়ষ্টতা কাটিয়ে নতুন ধর্মীয় উদ্যোম দেখা যায় সর্বত্র। রমজানের আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মুসলিমরা। কর্ম ব্যস্ততা কমিয়ে রমজানকে ইবাদত ও আনুগত্যের মধ্যে কাটানোর জন্য তৈরি হয় তারা।
তিউনিসিয়ার সচ্ছল মুসলিম পরিবারগুলো রমজানের আগমন উপলক্ষে ‘সালামিয়া’ নামক আনন্দ অনুষ্ঠান করে। সালামিয়া অনুষ্ঠানে প্রসিদ্ধ কবি ও গায়েনদের আমন্ত্রণ করা হয়। তারা সেখানে হামদ, নাত ও ভক্তিমূলক সুফি গান পরিবেশন করেন। সুফিগান তিউনিসিয়ার মুসলিম সংস্কৃতির প্রাণ বলা যায়। রমজান ছাড়াও তারা সুফিগানের চর্চা করে। রমজানে শহরের মসজিদ, রাস্তা, ক্যাফে হাউস ও জনসমাগমের স্থানগুলো আলোকসজ্জা করা হয়।
রমজানে তিউনিসিয়ান মুসলিমরা মুক্তহস্তে দান করে। বিশেষত তারা রমজানে সমাজের ঋণগ্রস্ত মানুষের ঋণ পরিশোধ করে দেয়। কেউ বা আবার ঋণের দাবি ত্যাগ করে। এতিম, অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে নতুন কাপড় উপহার দেওয়া তিউনিসিয়ান মুসলিমদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। রমজানে মসজিদের মিনারে মিনারে কোরআনের সুর ধ্বনিত হয়। মসজিদের মুসল্লিদের সমাগম বাড়ে। ইফতারের পর দ্রুত তারাবির জামাতে উপস্থিত হয়। প্রতিটি মসজিদে জোহর ও এশার নামাজের পর কোরআনের তাফসির ও হাদিসের দরস হয়। আসরের নামাজের পর মসজিদে কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরের মজলিস হয়। ইফতারের সময় সবার জন্য সম্মিলিত দোয়ার অনুষ্ঠান হয়।
রমজানে তিউনিসিয়ার প্রায় চার শ মসজিদে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা হয়। যাতে স্থানীয় হাফেজরা ছাড়াও ১৫টি আরব রাষ্ট্রের হাফেজরা অংশগ্রহণ করেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্বয়ং বাদশাহ সভাপতিত্ব করেন এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন। প্রথম পুরস্কার হিসেবে আড়াই হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়।
তিউনিসিয়ান মুসলিমদের নিজস্ব রমজান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। যার কিছু পারিবারিক আবার কিছু সামাজিক। যেমন তারা রমজানে মেয়েদের বিয়ে দেয়। যেসব মেয়ের বাগদানসম্পন্ন হয় তাদের ২৭ রমজানে পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার প্রদান করা হয়। স্থানীয় ভাষায় যাকে ‘মাওসুম’ বলা হয়। কোনো কোনো পরিবার রমজানের ২৭ তারিখ ছেলেদের খতনা করায় এবং সাধারণ মুসলমানদের সাহরি করায়।
রমজান মাসে খাবারের ক্ষেত্রেও তিউনিশিয়ানদের ভিন্নতা রয়েছে। রমজানের প্রথম রাত—যাকে স্থানীয়রা ‘লায়লাতুল কারশ’ বলে সে রাত থেকে তারা মিষ্টান্ন তৈরি করে। এ রাতটিকে তারা উদযাপন করে। ইফতারে খেজুর, দুধ ও কিশমিশ খেতে পছন্দ করে। থাকে বিভিন্ন ধরনের পিঠাও। সাহরিতে থাকে গোশতের যেকোনো আয়োজন। এ ছাড়া তারা রমজানে ‘রাফিসা’, ‘মাদমুজা’, ‘আসিদা’ ও ‘বারকুকাস’ নামক বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। তিউনিসিয়ান মুসলিমরা ইফতারের জন্য বিশেষ ধরনের রুটি ও হালুয়া তৈরি করে এবং তার প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করে। রুটি তাদের ইফতার আয়োজনের অন্যতম দিক।