Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মযে কারণে সাহাবিদের বিশেষ মর্যাদা

যে কারণে সাহাবিদের বিশেষ মর্যাদা

নবী মুহাম্মদ (সা.) সব মানুষের কাছে জান্নাতের বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। তিনি পার্থিব কোনো লক্ষ্য নিয়ে আসেননি এবং জাগতিক আকাঙ্ক্ষা দ্বারা তিনি পরিচালিতও হতেন না। ব্যয় করার জন্য তাঁর কাছে কোনো ধনভাণ্ডার ছিল না। খাদ্যশস্যের জন্য চমৎকার কোনো বাগান ছিল না; আর বাসস্থান হিসেবে কোনো সুন্দর প্রাসাদও ছিল না।

এর পরও তাঁর প্রিয় অনুসারীরা তাঁর প্রতি আনুগত্যের দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন এবং অবিচলভাবে তা রক্ষা করেছেন। তাঁরা বিপদসংকুল এক কঠিন জীবন সহ্য করেছেন। তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় স্বল্প ও দুর্বল, তাঁরা প্রতিবেশীদের দ্বারা সমূলে বিনাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভীত ছিলেন, তবু তাঁরা নবীজি (সা.)-কে পুরোপুরি ভালোবাসতেন।

তাঁদেরকে শিআবে আবি তালিবের গিরিখাতে বন্দি করা হয়েছিল।

তখন তাঁদের কাছে অল্প খাদ্য ছিল বা কোনো খাদ্য ছিল না। ইসলাম গ্রহণের কারণে তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি হারাতে হয়েছিল, তাঁদের আপনজনরাই তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, তবু মহানবী (সা.)-এর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ছিল নিখাদ।তাঁদের কাউকে মরুভূমির তপ্ত বালুর ওপর ফেলে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিছু লোককে বন্দি করা হয়েছিল আর অন্যরা নিত্যনতুন শাস্তির শিকার হয়েছিল। অবিশ্বাসীদের এমন নির্মম শাস্তি সহ্য করেও প্রিয় নবী (সা.)-কে মন-প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিলেন।

তাঁরা তাদের ঘরবাড়ি, স্বদেশ, পরিবার ও সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের বাল্যকালের খেলার মাঠ ও বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। এসব ভোগান্তি সত্ত্বেও তাঁরা তাঁকে দ্বিধাহীন ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন।একজন সাহাবিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) নবুয়তের সংবাদ ভিনদেশি এক শাসকের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব দিলেন। অথচ তিনি জানতেন যে, এটা এমন এক কাজ যা থেকে তিনি ফিরে আসবেন না।

আরেকজন সাহাবিকে এক কাজে পাঠানো হলো। তিনিও জানতেন যে, এটা তাঁর মৃত্যুর কারণ হতে পারে, তবু তিনি সন্তুষ্টচিত্তে তা মেনে নিলেন। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তাঁদের ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিল না।কিন্তু কেন তাঁরা তাঁকে ভালবাসতেন? কেন তাঁরা তাঁর নবুয়তের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁর আদর্শের ধারক হতে পেরে পরিতৃপ্ত ছিলেন? কেন তাঁরা তাঁর পথে চলতে গিয়ে যে সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তা ভুলে গেছেন? উত্তর হলো, নবীজি (সা.) ধর্ম, নৈতিকতা, মানবিকতা ও উদারতার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরা তাঁর মাঝে সত্য ও বিশুদ্ধতার সব নিদর্শন খুঁজে পেয়েছিলেন। যাঁর শিক্ষা ও বাণী মানুষের মনের হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা ও তিক্ততা শীতল করে দিয়েছিল। সত্য বাণী দিয়ে তিনি তাঁদের অন্তরকে শান্ত করে দিয়েছিলেন ও তাঁর রিসালাত দ্বারা তিনি তাঁদের অন্তরগুলোকে প্রশান্তিতে ভরে দিয়েছিলেন।

তিনি তাঁদের অন্তরগুলো এভাবে প্রশান্ত করেছিলেন যে তাঁর পাশে থাকার কারণে যে যাতনা ভোগ করতে হয়েছিল, তাঁরা তা তুচ্ছ মনে করেছিলেন। তিনি তাঁদের ভেতর হিদায়াতের আলো দ্বারা আলোকিত করেছিলেন। তিনি তাঁদের থেকে অজ্ঞতার বোঝা, মূর্তিপূজার বিকৃত রুচি এবং বহু-ঈশ্বরবাদের কুফল দূর করে দিয়েছিলেন। এভাবে তাঁদের দেহ-মন প্রশান্ত হয়েছিল ও তাঁদের আত্মা শান্তি পেয়েছিল। ফলে তাঁরা নবী কারিম (সা.)-এর সঙ্গে থেকে জীবনের স্বাদ উপলব্ধি করেছেন এবং তাঁরা তাঁর সাহচার্যে পুলক বোধ করেছিলেন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের ওপর যে বোঝা ও শৃঙ্খল ছিল, তিনি তাদের থেকে তা সরিয়ে দেন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তিনি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের দিকে আহবান করেন, যা তোমাদের প্রাণসঞ্চার করে তখন তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আহ্বানে সাড়া দিও।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত :২৪)

হে আল্লাহ! বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর করুণা ও শান্তি বর্ষণ করুন এবং তাঁর মহান সাহাবিদের সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার প্রতিদানস্বরূপ তাঁদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমিন।

‘লা তাহজান’ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments