প্রথমবারের মতো রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে পাকিস্তান। ইতোমধ্যে তেল কেনার অর্ডার মস্কোয় পৌঁছে গেছে। মূলত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল পাওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে নানামুখী অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দেশটি।
রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকিস্তানের তেলমন্ত্রী মোসাদ্দিক মালিক জানান, মস্কো পাকিস্তানের কাছে ছাড়ের দামে (ডিসকাউন্ট রেটে) অপরিশোধিত তেল বিক্রি করবে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর পর মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে ইউক্রেনের মিত্র পশ্চিমা। রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে দেশটির তেলের ওপর প্রাইস ক্যাপ আরোপ তথা তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় পশ্চিমারা।
তবে পশ্চিমাদের চমকে দিয়ে রাশিয়া কম দামেই ভিন্ন ভিন্ন উৎসে তেল রপ্তানির পাশাপাশি আগের আমদানিকারকদের কাছেও অধিক পরিমাণে তেল সরবরাহ করতে থাকে। যে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীন। এমনকি পশ্চিমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেও ভারত সেই ছাড়ের তেল বেশি পরিমাণে আমদানি করছে।
পাকিস্তানও বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ভারতের মতো রাশিয়ার ছাড়ের তেল কেনার কথা বলে আসছিল। দেশটির মন্ত্রীরা এর আগে বলেছেন, ভারত যদি পশ্চিমা মিত্র হয়েও রুশ তেল সস্তায় কিনতে পারে, তাহলে পাকিস্তান কেন পারবে না? কিন্তু এতদিন সে উদ্যোগ বাস্তবতার মুখ দেখেনি।
তবে দেরিতে হলেও রাশিয়ার সেই ছাড়ের তেল কিনছে পাকিস্তান। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের করা অর্ডার রাশিয়ায় পৌঁছে গেছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি নাগাদ রাশিয়ার তেল পেতে পারে পাকিস্তান।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নতুন চুক্তির আওতায় রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনবে ইসলামাবাদ। প্রথম দফার লেনদেন যদি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়; তাহলে রাশিয়া থেকে পাকিস্তানের প্রতিদিন তেল আমদানির পরিমাণ এক লাখ ব্যারেলে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া থেকে দুই ধরনের অপরিশোধিত তেল কিনবে ইসলামাবাদ। এর মধ্যে একটি হল উরাল ব্লেন্ড এবং অন্যটি সোকোল। তবে রাশিয়া থেকে কোনো পরিশোধিত তেল কেনার চুক্তি করেনি পাকিস্তান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত চুক্তির শর্তানুযায়ী- রাশিয়া থেকে পাকিস্তান যে অপরিশোধিত তেল কিনবে, তা পরিশোধন করার কাজে ইসলামাবাদকে সহযোগিতা করবেন রুশ তেল শিল্পের বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের তেলমন্ত্রী মুসাদ্দিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী মে মাসের মাঝামাঝি রাশিয়া থেকে প্রথম তেলের কার্গো পাকিস্তানের করাচি বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
মন্ত্রী মোসাদ্দিক বলেন, আমরা তেলের অর্ডার দিয়েছি এবং এরই মধ্যে অর্ডারটি রাশিয়ায় পৌঁছে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলছে। মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ তেলের প্রথম চালান করাচি বন্দরে এসে পৌঁছাতে পারে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল দেশ পাকিস্তান গত বছর প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ৫৪ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। এর বেশিরভাগই এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে। তবে এখন রাশিয়ার কাছ থেকে নিজেদের মোট চাহিদার শতকরা ৩৩ ভাগ তেল আমদানি করতে চায় ইসলামাবাদ।