Wednesday, October 4, 2023
spot_img
Homeধর্মযে কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে স্বচ্ছ লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ

যে কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে স্বচ্ছ লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ

মানুষ পারস্পরিক নির্ভরশীল। মানুষ তার প্রয়োজনের সব কিছু নিজেই সমাধা করতে পারে না। লেনদেন ও জীবিকা উপার্জনের বিষয়টি মানুষের নির্ভরশীলতার অন্যতম একটি। তাই আল্লাহ তাআলা ইবাদতের পাশাপাশি স্বচ্ছ লেনদেন ও হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জনের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। তা ছাড়া নৈতিক পন্থায় উপার্জন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে এবং মানুষকে উৎপাদনশীল নতুন নতুন কর্মে প্রেরণা জোগায়। অস্বচ্ছ লেনদেনে সমাজে অস্থিরতা ও দুর্নীতির পরিবেশ তৈরি হয়। অসৎ লেনদেন ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার আমানতদারি নেই তার ঈমান নেই। যার প্রতিশ্রুতির ঠিক নেই তার দ্বিন নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৩৮৩)

পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা স্বচ্ছ লেনদেন ও বৈধ পন্থায় উপার্জনের প্রতি মানুষকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। নিম্নে এর কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হলো—

অস্বচ্ছ লেনদেনকারীদের জন্য দুর্ভোগ

অস্বচ্ছ লেনদেনের অন্যতম উদাহরণ হলো মাপে বা ওজনে কম দেওয়া। সুরা মুতাফফিফিনের শুরুতেই আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন অন্যকে মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তাদের এক মহাদিবসে জীবিত করে ওঠানো হবে? যেদিন সব মানুষ রাব্বুল আলামিনের সামনে দাঁড়াবে।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৬)

এমনকি লেনদেনের অস্বচ্ছতায় বান্দার দোয়াও কবুল হয় না। নবীজি (সা.) একজন লোকের বর্ণনা দিলেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করেছে। চুলগুলো এলোমেলো, শরীর ধূলি-ধূসরিত। আসমানের দিকে হাত উত্তোলন করে দোয়া করছে, হে আমার রব, হে আমার রব, অথচ তার খাদ্য-পানীয় হারাম, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম, তাহলে কিভাবে তার দোয়া কবুল হবে? (মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)

ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) হাদিসটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এই হাদিসে উদাহরণস্বরূপ শুধু দোয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। নতুবা হারাম দ্বারা প্রতিপালিত হলে তার কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। (জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা ১৮৫)

অন্যের সম্পদ দখল করা কঠিন শাস্তি

আজকাল পৃথিবীতে অন্যের সম্পদ বিভিন্ন উপায়ে দখল করা যেন রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ অন্যের সম্পদ দখল বা আত্মসাৎ করা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ প্রসঙ্গে কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

একবার নবীজি (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? তারা বলেন, যার অর্থ-সম্পদ নেই আমরা তো তাকেই নিঃস্ব মনে করি। তখন নবীজি (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব ওই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের ময়দানে নামাজ, রোজা, জাকাত (সহ অনেক নেক আমল) নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু সে হয়তো কাউকে গালি দিয়েছে বা কারো ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে বা কারো সম্পদ দখল করেছে বা কাউকে খুন করেছে অথবা কাউকে আঘাত করেছে। ফলে প্রত্যেককে তার হক অনুযায়ী এই ব্যক্তির নেক আমল থেকে দিয়ে দেওয়া হবে। যদি কারো হক বাকি থেকে যায় আর এই ব্যক্তির নেক আমল শেষ হয়ে যায় তাহলে হকদার ব্যক্তির পাপ পাওনা অনুসারে এই ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সে এই পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১)

ভালোকে মন্দ দ্বারা পরিবর্তন করা মহাপাপ

এতিমদের সম্পদ সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে কোরআন মাজিদে লেনদেনের অনেক বড় মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এতিমদের তাদের সম্পদ দিয়ে দাও। আর ভালো সম্পদকে মন্দ সম্পদ দ্বারা পরিবর্তন করো না। তাদের (এতিমদের) সম্পদকে নিজেদের সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ো না। নিশ্চয়ই তা মহাপাপ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২)

বেচা-কেনার সময় কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা

ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন সময় আমরা যে চুক্তি করি তা পূর্ণ করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অঙ্গীকার পুরা করো। অর্থাৎ লেনদেনের বিভিন্ন অঙ্গীকার ও অন্যান্য অঙ্গীকার।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১)

অন্য আয়াতে বলেন, ‘(হে মুসলিমরা,) নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করছেন যে তোমরা আমানত ও পাওনা তার হকদারকে আদায় করে দেবে। আর যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে; ইনসাফের সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments