আলী রীয়াজ
মাহবুব তালুকদারের মৃত্যুতে শোকাহত। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি সত্য প্রকাশে অকুন্ঠিত ছিলেন – এটি সর্বজনবিদিত। নির্বাচন কমিশনের সদস্য হওয়াই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। তিনি ছিলেন লেখক, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন, নিষ্ঠার সঙ্গে। অন্য অনেকের তুলনায় তাঁর লেখক পরিচিতি খানিকটা সীমিত। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন – প্রচারের বাইরে থেকেই। এই সব গুন এখন বিরল। দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর কথা ও কাজের সমালোচনা স্বত্বেও স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে যোগাযোগ করে প্রশংসা করেছেন এমন লোকদের মধ্যে মাহবুব তালুকদার অন্যতম, সম্ভবত একমাত্র । ডেইলি স্টারে আমার এক লেখায় তাঁর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনার পরে তিনি ফোন করে জানিয়েছিলেন যে, আমার সমালোচনাকে তিনি যথাযথ মনে করেন। বলেছিলেন এই সমালোচনাগুলো অব্যাহত রাখতে, ‘আমাদের জন্যেই দরকার’ তিনি বলেছিলেন ।
এর আগে এবং পরে কথা হয়েছে অনেক বার – বিভিন্ন বিষয়ে। রাজনীতি, নির্বাচন, বাংলাদেশে শাসন ব্যবস্থা এইসব বিষয়ে আমাদের মত বিনিময় আমাকে সমৃদ্ধ করেছে – তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে তাঁর আন্তরিকতা। তাঁর নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছিলেন – হাতের অসম্পূর্ণ কাজটার খসড়া হয়েছিল; আশা করি চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি তৈরি করে যেতে পেরেছেন। কেননা তাঁর এই কাজটি আমাদের সবার জন্যেই দরকার। কথার কথা হিসেবে নয়, বইয়ের বিষয় জেনেই বলছি। তিনি তাঁর অন্য অনেক কাজের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। আমরা তাকে মনে করবো নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিকূল সময়ে এক সাহসী, বিবেকবান কন্ঠস্বর হিসবে। বাংলাদেশে যত দিন গণতন্ত্রের আকাঙ্খা থাকবে এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস লেখা হবে মাহবুব তালুকদারকে আমরা স্মরণ করবো। তাঁর পরিবার এবং নিকটজনদের প্রতি আমার সমবেদনা।

আলী রীয়াজ
[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া।]