Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeধর্মযেসব কারণে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে

যেসব কারণে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে

ইসলাম স্বামীর কাছে স্ত্রীর তালাক চাওয়াকে গুনাহের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। হাদিসে এসেছে, সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনোরূপ কষ্টের সম্মুখীন না হয়ে যে নারী তার স্বামীর কাছে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২২২৬; তিরমিজি, হাদিস : ১১৮৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৫৫)

তবে যদি কোনো বাস্তবসম্মত কারণে উভয়ের পক্ষে একসঙ্গে বসবাস করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে উভয় পক্ষ আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে না, তাহলে উভয়ের প্রতি কোনো গুনাহ নেই—যদি কোনো কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী নিজেকে মুক্ত করতে চায়।

এগুলো আল্লাহর আইন, কাজেই তোমরা এগুলোকে লঙ্ঘন কোরো না, আর যারা আল্লাহর আইনসমূহ লঙ্ঘন করবে, তারাই জালিম। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৯)

দুই. যেসব কারণে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে তা হলো—

১.   যদি স্বামীর মাঝে দৈহিক এমন ত্রুটি থাকে, যার কারণে দাম্পত্যজীবনের স্বাভাবিকতা খুবই দুরূহ হয়ে যায়। যেমন—পাগল হওয়া, যৌন অক্ষম হওয়া, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়া। এর দলিল হলো, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভালোভাবে রেখে দেবে কিংবা সদ্ব্যবহার সহকারে বিদায় দেবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৯)

     বলা বাহুল্য, স্বামীর মাঝে উক্ত ত্রুটিগুলো থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে ভালোভাবে রাখা সম্ভব নয়।

২.   স্বামী স্ত্রীর আবশ্যকীয় জরুরত তথা ভরণ-পোষণ দিতে অক্ষম হলে। কেননা, এটা স্ত্রীর মৌলিক অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা অনুসারে ব্যয় করবে। আর যার রিজিক সীমিত করা হয়েছে, সে ব্যয় করবে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৭)

৩.   স্বামীর দীর্ঘ সফরের কারণে স্ত্রী যদি নিজের চারিত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় কিংবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়। আর এর সর্বনিম্ন সময়সীমা ছয় মাস। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘ওমর (রা.) নিজ কন্যা হাফসা (রা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে সে সময়ে মুজাহিদদের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস বাইরে থাকার ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করেছিলেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১২৫৯৪)

৪.   শরিয়ত নির্দেশিত কারণ ছাড়া স্বামী স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া বা জুলুম করা। এটা শারীরিকভাবেও হতে এবং মানসিকভাবে হতে পারে। যেমন—স্ত্রীকে মারধর করা, গালাগাল করা, স্ত্রীকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে বাধা প্রদান করা, বেপর্দা কিংবা হারাম কাজে স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাধ্য করা। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,  ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪১)

৫.   স্বামীর মধ্যে দ্বিনদারির প্রতি অবহেলা চরম পর্যায়ের হলে। যেমন—নামাজ না পড়া, মদ পান করা, পরকীয়া কিংবা চারিত্রিক অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হওয়া। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যে ছেলের দ্বিনদারি থাকা ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারো সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না করো তাহলে পৃথিবীতে মহা ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)

     বোঝা গেল, স্বামীর মধ্যে দ্বিনদারি থাকা আবশ্যক, যেমন স্ত্রীর মধ্যে দ্বিনদারি থাকা অপরিহার্য।

৬.   রুচির ভিন্নতা কিংবা অন্য যেকোনো কারণে বনিবনা না হলে, সংসারে অশান্তি অমিল হলে এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হলে। এ ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে স্বামী কিংবা স্ত্রী কিংবা উভয়ই দ্বিনদার; তবু সংসারে অশান্তি অমিল লেগেই থাকে। এর দলিল হলো, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে সাবেত ইবনে কাইস (রা.)-এর স্ত্রী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! সাবেত ইবনে কাইসের দ্বিনদারি এবং চরিত্রের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই; কিন্তু আমি মুসলিম হয়ে কুফরি করা (স্বামীর সঙ্গে অমিল) মোটেও পছন্দ করি না। রাসুল (সা.) বলেন, তুমি কি তাকে মোহর হিসেবে তোমাকে যে বাগান দিয়েছিল তা ফিরিয়ে দেবে? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসুল (সা.) সাবেত (রা.)-কে বলেন, বাগানটি ফেরত নিয়ে তাকে এক তালাক দিয়ে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৫২৭৩)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments