Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মযেসব কারণে অন্তর কঠোর হয়ে যায়

যেসব কারণে অন্তর কঠোর হয়ে যায়

আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপের কারণে মানুষের অন্তর কঠোর হয়ে যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাষাণ কিংবা তার চেয়ে বেশি কঠিন…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৭৪)

অন্তর কঠিন হওয়ার অনেক কারণ আছে। নিম্নে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো—

অন্তরকে দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত রাখা : যদি অন্তরে দুনিয়ার ভালোবাসা আখিরাতের ভালোবাসার চেয়ে প্রাধান্য পায়, তাহলে ধীরে ধীরে অন্তর কঠিন হতে শুরু করে। ফলে ঈমান কমে যায়, সৎকাজকে ভারী মনে হয়, দুনিয়াকে ভালোবাসা শুরু করে এবং আখিরাতকে ভুলে যেতে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাতই উত্কৃষ্টতর এবং স্থায়ী।’ (সুরা : আলা, আয়াত : ১৬-১৭)

গাফিলতি ও উদাসীনতা : গাফিলতি একটি সংক্রামক ব্যাধি। অন্তর এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের সব অঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের সব অঙ্গ কর্মক্ষমতা হারায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ রয়েছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। এরা হলো পশুর মতো, বরং তার চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত। তারাই হলো গাফিল বা অমনোযোগী।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৯)

অসৎসঙ্গীদের সঙ্গে ওঠাবসা করা : মানুষ যার সঙ্গে চলাফেরা করে, তার আচার-আচরণ অন্যজনের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, সৎসঙ্গী ও অসৎসঙ্গীর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের মতো। আতর বিক্রেতার থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয়তো তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয়তো তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে। (বুখারি, হাদিস : ২১০১)

পাপ ও খারাপ কাজ বেশি করা : বেশি পরিমাণ পাপ বান্দার অন্তরকে কঠিন করে তোলে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন বান্দা কোনো পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। যখন সে তাওবা করে, তখন সেটি তুলে নেওয়া হয়। আর ইস্তিগফারের মাধ্যমে অন্তরকে পরিষ্কার করা হয়। আর যদি পাপ বাড়তে থাকে, তাহলে দাগও বাড়তে থাকে। আর এটিই হলো মরিচা। যেমন—আল্লাহ বলেন, না, এটি সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের ওপর মরিচারূপে জমে গেছে। [(সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১৪), আহমাদ ও তিরমিজি]

মৃত্যুর কথা ভুলে যাওয়া : মৃত্যু ও আখিরাতের চিন্তা মানুষের অন্তরকে নরম রাখে। কেউ মৃত্যুর কথা ও আখিরাতে জবাবদিহির কথা ভুলে গেলে তার অন্তর কঠিন হয়ে যায়।

কঠিন অন্তর চেনার উপায়

কঠিন অন্তর চেনার কয়েকটি উপায় আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—

ইবাদতে অলসতা : মানুষের অন্তর কঠিন হলে ইবাদতে অলসতা চলে আসবে। সালাত পড়তে মন চাইবে না কিংবা সালাত পড়লেও অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকবে না। সালাতে নফল ও সুন্নত আদায়ের পরিমাণ কমে যাবে। মোনাফেকদের চরিত্র প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,  ‘তারা সালাতে আসে অলসতার সঙ্গে আর ব্যয় করে সংকুচিত মনে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৫৪)

উপদেশ শুনে অন্তর প্রভাবিত না হওয়া : অন্তর কঠিন হলে মানুষ কোরআনের আয়াত কিংবা দ্বিনি উপদেশ শুনে, বিশেষ করে আজাবের কথা শুনে ভীত হয় না, বরং কোরআন পড়া ও শোনাকে নিজের কাছে ভারী মনে হয়। মহান আল্লাহ মুমিনদের প্রশংসা করে বলেন, ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদিগারের প্রতি ভরসা করে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)

দুনিয়ায় আজাব-গজব দেখে অন্তর ভীত না হওয়া : মানুষ সাধারণত আজাব-গজব ও আপনজনের মৃত্যু দেখলে ভীত হয়। কিন্তু কেউ যদি ভীত না হয়, ভালো আমল না করে, খারাপ আমল ছেড়ে না দেয়, তাহলে বুঝতে হবে তার অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি লক্ষ করে না, প্রতিবছর তারা দু-একবার বিপর্যস্ত হচ্ছে, অথচ তারা এর পরও তাওবা করে না কিংবা উপদেশ গ্রহণ করে না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৬)

দ্বিনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়া : যার অন্তর নরম, তার অন্তরে দ্বিনের প্রতি, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকে। ফলে ইবাদত করা ওই ব্যক্তির জন্য সহজ হয়। কিন্তু যার অন্তর কঠোর হয়ে গেছে, তার অন্তর থেকে দ্বিনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়। ফলে দ্বিন-ধর্মের কথা তার কাছে ভালো লাগে না। তার অন্তরে ধর্মের ব্যাপারে অনীহা তৈরি হয়।

মহান আল্লাহ আমাদের অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments