Wednesday, March 22, 2023
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকযেভাবে রাশিয়া থেকে তেল কিনেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রেখেছে ভারত

যেভাবে রাশিয়া থেকে তেল কিনেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রেখেছে ভারত

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতকে নিয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান বদলে গেছে। এক মাস আগেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক আপত্তি ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর। কারণ, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পরেও ভারতের তরফ থেকে রাশিয়াকে কোনো নিন্দা জানানো হয়নি। আবার যখন পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে, তখন ভারত উল্টো রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধি করছে। এ নিয়ে ভারতের প্রতি হতাশা প্রকাশে দেরি করেনি হোয়াইট হাউসও।

কিন্তু এখন পশ্চিমাদের সেই সুরে পরিবর্তন এসেছে। এ মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এসব ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন বাইডেন। সেখানে দুই দেশের জনগণের মধ্যেকার গভীর সংযোগের কথা তুলে ধরেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও দিল্লি সফর করেছেন।সেখানে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু ইউক্রেন নিয়ে ভারতের অবস্থান সেই আগের মতোই রয়েছে। এখনো রাশিয়ার কম মূল্যের তেল কিনছে তারা। ২০২১ সালে যত রাশিয়া থেকে যত তেল আমদানি করেছে ভারত, এ বছরের প্রথম ৪ মাসেই তার থেকে বেশি তেল আমদানি করেছে দেশটি। পাশাপাশি মস্কোর আগ্রাসন নিয়ে এখনও কোনো বক্তব্য নেই ভারতের। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে কোনো ভোটও দেয়নি।

এশিয়ায় চীনের উত্থান ঠেকাতে ভারতকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। বর্তমান হিসেবে রাশিয়ার থেকেও চীনকে বিশ্ব শান্তির জন্য বড় হুমকি মনে করে দেশটি। তাই ভারতের বিরুদ্ধে চাপ দেয়ার পরই আবার নিজেদের থামাতে হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বকে। কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর হারশ প্যান্টও একই কথাই বলেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখন বুঝতে পারছে যে নতুন সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে তাদের সমর্থন দিয়েই যেতে হবে।
নয়া দিল্লি ও ওয়াশিংটন উভয়েই চীনের সামরিক শক্তির উত্থান নিয়ে চিন্তিত। শুধু শক্তি বৃদ্ধিই নয়, চীন এখন বিভিন্ন দিকে নিজের ভূখ- বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এর প্রতিবেশী দেশগুলোর উপরে অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর অধীনে চীনের সামরিক বাহিনী বিশ্বের সবথেকে বড় সামরিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনা করলে এই বাহিনী বিশ্বের সবথেকে আধুনিক বাহিনীগুলোর একটি। অত্যাধুনিক স্টিলথ যুদ্ধবিমান কিংবা পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার, কী নেই এই বাহিনীতে!

এই চীনের হুমকি মোকাবেলায় জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। গঠন করা হয়েছে কোয়াড। তবে চীনকে নিয়ে ভারতের উদ্বেগ অন্যরকম। গত কয়েক বছর ধরেই হিমালয় সীমান্তে চীন-ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরাসরি সংঘাতে উভয় পাশের কয়েক ডজন সেনা মারা গেছে। কিন্তু এরপরেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রমুখী হয়নি। দেশটি তার সামরিক চাহিদা মেটায় রাশিয়া থেকে অস্ত্র আমদানির মাধ্যমে।

চীনকে নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ এক না হলেও উভয় দেশই সতর্ক হয়ে আছে। বাইডেন-মোদি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও। তিনি সাবধান করে বলেন, চীন এ অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সিস্টেম পাল্টে দিতে চায়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে নতুন পথ খুঁজে পেয়েছে বলেও জানান তিনি। ভারতের তক্ষশীলা ইনস্টিটিউটের মনোজ কেওয়ালরামানি বলেন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থান আলাদা হলেও গভীরে দেশ দুটি একে অপরকে বুঝতে পারে।

রাশিয়ার নিন্দা না জানানো নিয়ে ভারতের উপরে চাপ প্রয়োগ কমিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধে চীন ও ভারতের অবস্থান একই। তারা নিজেদের নিরপেক্ষ দেখাতেই বেশি ব্যস্ত। উভয় দেশই শান্তির আহ্বান জানিয়েছে, এবং কেউই আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানায়নি। দুই দেশেরই রাশিয়ার সঙ্গে অসাধারণ বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, চীন-রাশিয়া সম্পর্কের কোনো ‘সীমা নেই’। অপরদিকে ভারতও তার সামরিক চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করে রাশিয়া থেকে।

তবে এর মানে এই নয় যে, চীন ও ভারত একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে। মনোজ বললেন, চীন প্রথম থেকেই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করছে। ইউক্রেনের সংঘাতের জন্যেও দেশটি পশ্চিমাদেরই দুষছে। অর্থাৎ, ন্যাটোকে রাশিয়া যেভাবে নিজের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে, চীনও তাকে সমর্থন করছে। চীনের গণমাধ্যমও রাশিয়ার পক্ষ তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করছে। কিন্তু ভারতের ন্যাটো নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথাও বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে চীনের নেতারা ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিরত ছিলে। তাছাড়া ইউক্রেনের মানবিক পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় দূত ইউক্রেনের বুচা শহরের গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে এ নিয়ে তদন্তের দাবি জানান। এই হত্যাযজ্ঞকে পীড়াদায়ক বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ভারত ও রাশিয়ার মধ্যেকার ঐতিহাসিক সম্পর্কের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। সম্প্রতি তিনি বলেন, এমন একটি সময়ে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সহযোগী বানাতে পারেনি। তিনি মূলত স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের কথা বলেছেন। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে চলেছিল। ফলে ভারত তখন মার্কিনবিরোধী সোভিয়ে ইউনিয়নের দিকে হেলে পড়ে। তখন থেকেই ভারতকে অস্ত্র দিতে থাকে রাশিয়া। এভাবেই এক পর্যায়ে পুরোপুরি রাশিয়ার উপরে নির্ভর করতে শুরু করে দেশটি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments