Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeধর্মযেভাবে নিশ্চিহ্ন হয় দাপুটে আদ জাতি

যেভাবে নিশ্চিহ্ন হয় দাপুটে আদ জাতি

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ঐতিহাসিক একটি জাতি ‘আদ’ জাতি। ধারণা করা হয়, এদের যুগ ছিল ঈসা (আ.)-এর প্রায় দুই হাজার বছর আগে। কোরআনে এদের নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের পরবর্তী সম্প্রদায় বলে উল্লেখ করে নুহ (আ.)-এর প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

আদ সম্প্রদায়ের বসবাসের কেন্দ্রস্থল ছিল ‘আহকাফ’ অঞ্চল।

এটা ‘হাজরামাউত’-এর উত্তরে অবস্থিত ছিল। এর ভৌগোলিক অবস্থান এমন—এর পূর্বে ওমান, দক্ষিণে ‘হাজরামাউত’ এবং উত্তরে ‘রুবউলখালি’। কিন্তু বর্তমানে এখানে বালুর স্তূপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আর কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন, তাদের বসবাস এলাকা আরবের সর্বোত্কৃষ্ট অংশ হাজরামাউত ও ইয়েমেনে পারস্য উপসাগরের তীরে ইরাকের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইয়েমেন ছিল তাদের রাজধানী।

ধর্মীয় দিক থেকে এরা ছিল মূর্তিপূজক। মূর্তিনির্মাণে তারা ছিল বেশ দক্ষ ও অভিজ্ঞ। আদ সম্প্রদায় তাদের রাজত্বের প্রতাপ ও দাপট, দৈহিক শক্তিমত্তা ও ক্ষমতার অহংকারে এতটাই মত্ত হয়ে পড়েছিল যে তারা একমাত্র মাবুদ আল্লাহ তাআলাকে একেবারেই ভুলে বসেছিল এবং বেশ দাপটের সঙ্গে আল্লাহর নাফরমানি ও শিরকে লিপ্ত ছিল। মহান আল্লাহ তাদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হুদ (আ.)-কে নবী করে পাঠালেন। তিনি ছিলেন ‘আদ’ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে সম্মানিত শাখা ‘খুলুদ’-এর সদস্য।

হুদ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলার একত্ব ও তাঁর ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানালেন। মানুষের প্রতি জুলুম করতে নিষেধ করলেন। কিন্তু আদ জাতি তাঁর কথায় মোটেই কান দিলেন না। তাঁকে কঠোরভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং ঔদ্ধত্য ও গর্বের সঙ্গে বলল, ‘আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর কে আছে?’ আজ গোটা পৃথিবীতে আমাদের চেয়ে অধিক প্রতাপ ও ক্ষমতার অধিকারী আর কে আছে? কিন্তু হজরত হুদ (আ.) অবিরাম ইসলামের দাওয়াত দিয়েই গেলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করতে এবং অহংকার ও অবাধ্যতার পরিণাম বর্ণনা করে নুহ (আ.)-এর ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিতেন।

এবং তাদের পাপের পথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাতেন। তাঁর দাওয়াতে কিছুসংখ্যক লোক পাপের পথ থেকে ফিরে এলেও বেশির ভাগই তাদের নবীর কথায় ভ্রুক্ষেপ করেনি, যার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। বিষয়টি পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে খুব স্পষ্ট ভাষায় উল্লিখিত হয়েছে।

আদ জাতির অমার্জনীয় হঠকারিতার ফলে প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে উপর্যুপরি তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেতসমূহ শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়। বাগ-বাগিচা জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেনি। কিন্তু অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। তখন আসমানে সাদা, কালো ও লাল মেঘ দেখা দেয় এবং গায়েবি আওয়াজ আসে যে তোমরা কোনটি পছন্দ করো? লোকেরা কালো মেঘ কামনা করল। তখন কালো মেঘ এলো। লোকেরা তাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, ‘এটি আমাদের বৃষ্টি দেবে। ’ জবাবে তাদের নবী হুদ (আ.) বললেন, ‘বরং এটা সেই বস্তু, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে। এটা এমন বায়ু যার মধ্যে রয়েছে মর্মন্তুদ আজাব। ’ ‘সে তার প্রভুর আদেশে সবাইকে ধ্বংস করে দেবে…। ’ ফলে অবশেষে পরদিন ভোরে আল্লাহর চূড়ান্ত গজব নেমে আসে। সাত রাত ও আট দিনব্যাপী অনবরত ঝড়-তুফান বইতে থাকে। মেঘের বিকট গর্জন ও বজ্রাঘাতে বাড়ি-ঘর সব ধসে যায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা সব উপড়ে যায়, মানুষ ও জীবজন্তু শূন্যে উত্থিত হয়ে সজোরে জমিনে পতিত হয় (সূত্র : সুরা কামার, আয়াত : ২০, সুরা : হাককাহ, আয়াত ৬-৮) এবং এভাবেই শক্তিশালী ও সুঠাম দেহের অধিকারী বিশালবপু আদ জাতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

     তথ্যসূত্র : কাসাসুল কোরআন, খণ্ড : ১

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments