খলিফা শব্দটি আরবি। অর্থ—প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত Representative। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে পৃথিবীতে খলিফা হিসেবে প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীর প্রথম খলিফা হলেন আদম (আ.)। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বলেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা বানাতে যাচ্ছি…।’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩০)
নবী-রাসুল ও তাঁদের অনুসারী বিশ্বাসী মানুষ পৃথিবীর খলিফা। পৃথিবী আল্লাহ তাআলার। পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারও নবী-রাসুল এবং তাঁদের অনুসারীদের। আগে এক নবীর ওফাতের পর অন্য নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তবে রাসুল (সা.)-এর পর আর কেউ নবী হবেন না।
নবী-রাসুলরা ছিলেন পৃথিবীর খলিফা : যুগে যুগে নবী-রাসুলরা পৃথিবীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। নুহ (আ.) শরিয়তের প্রথম নবী ও খলিফা।
নুহ (আ.)-এর পঞ্চম পুরুষ হলেন আদ। তাঁর নামে বংশের নাম হয় আদ বংশ। এ বংশকে ইরাম বংশও বলা হয়। কারো মতে আদের দাদার নাম ছিল ইরাম। তাঁর এক পুত্র আউসের বংশধররাই আদ। তাদের প্রথম আদ বলা হয়। আদ জাতির ১৩ পরিবার ছিল। তারা ছিল সুঠামদেহী ও সম্পদশালী। আল্লাহ তাদের কাছে হুদ (আ.)-কে প্রেরণ করেন। আল্লাহর বাণী—‘আর তোমরা স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাদের (আদ জাতিকে) নুহ জাতির পর খলিফা বানিয়েছেন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬৯)
আদ ও সামুদ একই দাদার বংশধরের দুই ব্যক্তির নাম। সামুদ জাতিও আদ জাতির মতো শক্তিশালী ও বীর জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্যবিদ্যায় খুবই দক্ষ ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে সালেহ (আ.)-কে প্রেরণ করেন। আল্লাহর বাণী—‘সামুদ জাতির কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৭৩)
দাউদ (আ.) প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলিফা করেছি, অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সংগতভাবে রাজত্ব করো এবং খেয়াল-খুশির অনুসরণ কোরো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ৬)। আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের পতনের পর মুসা (আ.)-কে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব দান করেছেন। তারপর ঈসা (আ.)-কে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব দান করেছেন।
শেষ নবীর উম্মতের খেলাফত লাভ : মুসা (আ.)-এর অনুসারী ইহুদিরা এবং ঈসা (আ.)-এর অনুসারী খ্রিস্টানরা যখন তাদের নবীর আদর্শ থেকে দূরে সরে যায় এবং আসমানি কিতাবকে বিকৃত করে, তখনই আল্লাহ তাআলা শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর উম্মতকে তাদের খলিফা করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘বলে দাও, কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদের পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন?’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬২)
খিলাফতের যোগ্যতা : সৎ, নেককার, স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানবান, পুরুষ, মুত্তাকি ও পরহেজগার ব্যক্তিই খিলাফতের যোগ্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি উপদেশের পর জাবুরে লিখে দিয়েছি যে আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দারা অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৫)
খলিফার দায়িত্ব : খলিফার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ দায়িত্ব হলো—১. রাষ্ট্রে শরয়ি বিধি-বিধান জারি করা, ২. রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ ও হেফাজত করা ৩. গুরুতর অপরাধসমূহের দণ্ডবিধি প্রতিষ্ঠা করা, ৪. দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, ৫. সামরিক বাহিনী গঠন করা, ৬. জাকাত, সদকা, জিজিয়া ইত্যাদি আদায় করা, ৭. অত্যাচারী, চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসী ইত্যাদি কঠোর হস্তে দমন করা, ৮. ঈদ ও জুমার নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, ১০. অভিভাবকহীন নাবালেগ ছেলে-মেয়েদের বিয়েশাদির ব্যবস্থা করা, ১১. গনিমতের সম্পদ বণ্টন করা, ১২. সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন এবং কাজি, মুফতি, খতিব, শিক্ষক প্রমুখকে বায়তুল মাল থেকে ভাতার ব্যবস্থা করা, ১৩. দরিদ্র, নিঃস্ব ও বৃদ্ধ নর-নারীদের ভাতার ব্যবস্থা করা, ১৪. ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।