ইদানীং যানজটের নিত্য দুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বড় বড় নিউজ ছাপা হচ্ছে। প্রতিদিন মানুষের জীবনের মূল্যবান সময়ের বেশ কিছু অংশ যানজটেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ যানজটের অবসর সময়কে অবহেলায় কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা একটু সচেতন হলে, ছোট ছোট আমলের মাধ্যমে যানজটের সময়গুলোকে ইবাদতে পরিণত করতে পারি।
কিয়ামতের দিন ছোট কোনো আমলও অনেক মূল্যবান হয়ে যাবে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে যে ব্যাপারে অধিকাংশ লোক ধোঁকায় পতিত সুস্বাস্থ্য ও সুসময় বা অবসর। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৭০)
তাই আমাদের উচিত, যানজটে কাটানো অবসর সময়কে অবহেলা না করে তাকে আমলময় করে তোলা। নিম্নে যানজটের সময়কে কাজে লাগানোর কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:
কোরআন তিলাওয়াত করা : এখন অনেকের স্মার্টফোনেই পবিত্র কোরআনের অ্যাপস ও পিডিএফ থাকে, ফলে কেউ চাইলে যানজটের সময়কে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে পুণ্যময় করে তুলতে পারে। কারণ কোরআন তিলাওয়াতে প্রতিটি হরফের বিনিময়ে নেকি লেখা হয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)
জিকির : যানজটের সময়কে কাজে লাগানোর অন্যতম একটি উপায় হলো আল্লাহর জিকির। জিকিরের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়, অন্তর প্রশান্ত হয়। জিকির আল্লাহর কাছে এতটাই পছন্দনীয় কাজ যে তিনি জিকিরে অভ্যস্ত বান্দাদের ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের জন্য রেখেছেন মহা প্রতিদান। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী, এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। ’ (সুরা : আল-আহজাব, আয়াত : ৩৫)
নিম্নে কিছু ফজিলতপূর্ণ জিকিরসংবলিত কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো;
হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়। (তিরমিজি : ৩৪৬৪)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা বলা সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছেও অধিক পছন্দনীয়। সেটি হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম। ’ (বুখারি : ৬৪০৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে লোক প্রতিদিন এক শবার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৫)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে ১০০ বার বলবে, ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলে, তাহলে সৃষ্টিকুলের কেউই তার মতো মর্যাদা ও সওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯১)
সুরা ইখলাস : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কি কেউ প্রতি রাতে কোরআন শরিফের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে অক্ষম? তাহলে সে প্রতি রাতে সুরা ইখলাস পড়বে। তাহলে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যাবে। ’ (মুসনাদে আহমদ : ২৩৫৫৪)
ইস্তিগফার করা : অধিক হারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইস্তিগফার (সংক্ষিপ্ত একটি ইস্তিগফার হলো, আসতাগফিরুল্লাহ) পড়া। ইস্তিগফারের বহুবিধ উপকারিতার কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো। তাহলে তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উত্কৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩)
আল্লাহর গুণবাচন নাম মুখস্থ করা : এ ছাড়া যারা আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামগুলো মুখস্থ করবে তাদের জন্যও জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। এর কারণ হলো, যে আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামগুলো জানবে, সে সেই নামগুলোর জিকিরের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার ৯৯টি নাম আছে, যে ব্যক্তি তা আয়ত্ত করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৭৩৬)