এক বছর আন্দোলনের পর তিনটি কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে এমন আইন প্রণয়নের কারণে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। গত বছরের নভেম্বর থেকে হাজার হাজার কৃষক রাজধানী দিল্লির বাইরে অবস্থান করে মোদি সরকারের কৃষি আইনের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে কয়েক ডজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে তীব্র গরম, ঠান্ডা ও কোভিডে। তবে শেষ পর্যন্ত এই ত্যাগের বিনিময়ে কৃষকদেরই জয় হলো। উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের মতো প্রদেশগুলোতে নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই বিতর্কিত ওই তিন আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
তিনি শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মদিনের মতো বিশেষ সময়কেই বেছে নিয়েছেন এই ঘোষণা দেয়ার জন্য। গুরু নানকের জন্মদিন পাঞ্জাবের অন্যতম প্রধান উৎসব।বক্তব্যে মোদি বলেন, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছ হৃদয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। কৃষকদের আমরা বোঝাতে পারিনি। আমাদের চেষ্টায় ত্রুটি ছিল। তবে আজকের দিনে কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়। আমি সমগ্র দেশকে জানাতে চাই, আমরা ওই তিনটি কৃষি আইন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ মাসের শেষে শুরু হতে চলা পার্লামেন্ট অধিবেশনে এই আইন বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তিনি কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, গুরু নানকের জন্মদিনের মতো শুভ দিনে আপনারা পরিবারের কাছে ফিরে যান, মাঠে ফিরে যান এবং নতুন দিনের সূচনা করুন। চলুন আমরা আবার নতুন করে শুরু করি।
বক্তব্যে যদিও ওই তিনটি আইন প্রণয়নকে ভুল পদক্ষেপ মানতে অস্বীকার করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ওই আইনগুলো ছিল একটি সংস্কার প্রচেষ্টা। এর মধ্য দিয়ে মূলত ছোট ও মাঝারি কৃষকরা উপকৃত হতো। মোদি বলেন, আমি যাই করেনি কৃষকদের জন্য করেছি। আমি যাই করি তা দেশের স্বার্থের জন্যেই করি।
ওই আইন প্রনয়নের পর গত এক বছর ধরে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশের হাজার হাজার কৃষক দিল্লির বাইরে লাগাতার প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা এই আইনকে ‘কালো আইন’ বলে আখ্যায়িত করেন। এ আইনের কারণে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি একাধিক প্রদেশে বড় ধরণের জনরোষের মুখে পরে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছিলেন, সামনে বেশ কয়েকটি প্রদেশে যে নির্বাচন রয়েছে তাতে এই জনরোষের প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও বিজেপির আশঙ্কা বাড়ছিল। অতপর কৃষকদের দাবির মুখে পিছু হটতেই হলো মোদি সরকারকে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এর আগেও একবার ক্ষমা চাইতে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদিকে। এবার এ ক্ষমা চাওয়াটাকেই বিরোধীরা হাতিয়ার করার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ বলেছেন, মোদি সরকারের ঔদ্ধত্যের বিনাশ হল। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের লকডাউনের ঘোষণার পর হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক, সাধারণ মানুষকে চরম সঙ্কটের মুখে পড়তে হয়েছিল ভারতে। মূলত মোদির সিদ্ধান্তেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। ফলে দেশ জুড়ে বিপুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। শেষমেশ ক্ষমা চেয়েছিলেন মোদি। এবার আবারো কৃষকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হলো তাকে।
আইন বাতিলের খবর পেয়ে আনোন্দৎসব করতে থাকেন কৃষকরা। তাদের সেই জয়োল্লাসের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। কৃষি আইন প্রত্যাহারের খবর শুনতেই উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। বিলানো শুরু হয় মিষ্টি, জিলাপি। ভারতের কৃষকদের কাছে এ এক বিশাল জয়। দীর্ঘ এক বছর আন্দোলনের জয়। আর সেই জয়ের আস্বাদ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে দেখা গেল কৃষকদের। আগামি ২৯ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে পার্লামেন্টের অধিবেশন। কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, তারা খুশি হলেও শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। পার্লামেন্টে আইন বাতিলের প্রক্রিয়া শেষ হলেই তারা ফিরে যাবেন। এর আগে যথারীতি অবস্থান করবেন তারা।