চার বছর বয়সী লাবিব খন্দকার কোলে চড়ে আসে প্রতিবাদসভায়। নিউ ইয়র্কের ওজন পার্কের আল-আমান জামে মসজিদের সামনে তখন জমায়েত হয়েছেন কয়েক শ মানুষ। অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে আসেন অন্য ভাষাভাষীর আমেরিকানরাও।
মুসলমানদের সঙ্গে সংহতি জানাতে জড়ো হন অন্য ধর্মের মানুষও।
মাইকে জোরালো বক্তব্য, প্রতিবাদ, স্লোগান কিংবা বিচারের দাবি; কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না অবুঝ শিশুটি। শুধু ভিড়ের মধ্যে দিকভ্রান্তের মতো সে যেন শুধু খুঁজছিল তার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে। আর শিশুটির এমন দৃষ্টি সেখানে উপস্থিত সবাইকে যেন অপরাধী করে দেয়, নাড়া দিয়ে যায় ভীষণভাবে।
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ওজন পার্কে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার প্রতিবাদ জানাতে স্থানীয় সময় শুক্রবার জুমার নামাজের পর আয়োজন করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশের। সমাবেশে যোগ দেন নিহত খন্দকার মোদাচ্ছেরের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা, সামাজিক সংগঠনের সদস্য, সমাজকর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মের নেতারা। এ সময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
সমাবেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা খন্দকার মোদাচ্ছেরের হত্যাকাণ্ডকে পরিষ্কার ‘ঘৃণ্য অপরাধ’ উল্লেখ করে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। সেই সঙ্গে ওজন পার্কসহ নিউ ইয়র্কজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতির কথা তুলে ধরে গভীর উদ্বেগ জানান। পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তারা।
সমাবেশে উপস্থিত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবটা দিয়েই খুনিদের আটকের চেষ্টা করবেন তারা। এ সময় তারা নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, তারা যেন ন্যায়বিচার পান, পুলিশের পক্ষে সে জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও, পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আল আমান জামে মসজিদের ভাইস প্রেসিডেন্ট কবির চৌধুরী বলেন, খুনিদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না গেলে তারা ভবিষ্যতে আরো দুঃসাহস দেখাবে। তাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
ব্রুকলিন থেকে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান কাউন্সিল ওম্যান শাহানা হানিফ বলেছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের কাছে প্রথম উদ্দেশ্য। পুলিশের সঙ্গে আমাদের প্রত্যেককে তৎপর হতে হবে। নিউ ইয়র্ক শহরে অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার রোধে তার জায়গা থেকে সম্ভাব্য সব কিছুই করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
![](https://www.kalerkantho.com/ckfinder/innerfiles/images/kids800x483.jpg)
জড়িতদের সন্ধানে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ-এনওয়াইপিডির পক্ষ থেকে হ্যান্ডবিল প্রকাশ করা হয়েছে। খুনিদের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে আরো নানা তৎপরতা। মসজিদ, বিভিন্ন বাড়ি, দোকান ও রাস্তার সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।
ওজন পার্কের গ্লেনমোর এভিনিউয়ের কাছে ফরবেল স্ট্রিটে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে কর্মস্থল জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পথে ঠিক নিজ বাড়ির সামনেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন খন্দকার মোদাচ্ছের। এ ঘটনায় সেখানকার বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করছে।