শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ মোগলদের স্মৃতিবিজড়িত দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এই স্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বপশ্চিমে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বর্তমানে এই মসজিদকে মোগল যুগের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন ও প্রাচীন মসজিদ বলে বিবেচনা করা হয়। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই রয়েছে তাহখানা কমপ্লেক্স। তাহখানা ফারসি শব্দ। এর অর্থ ঠাণ্ডা ভবন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা বাংলার সুবাদার থাকাকালে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে মতান্তরে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামত উল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তাহখানা নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে যে শাহ সুজা যখন পিরোজপুরে মোরশেদ শাহ নেয়ামত উল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসতেন, তখন ওই ইমারতের মধ্যবর্তী সুপ্রশস্ত কক্ষে বাস করতেন। সেই তাহখানার মূল প্রাসাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সামান্য দূরে রয়েছে শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। এর নির্মাণ সন জানার মতো কোনো শিলালিপি না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয়, এটি শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা বাংলার সুবাদার থাকাকালেই নির্মিত হয়েছে।
নজরকাড়া এই মসজিদের সামনের দিকে মোট তিনটি দরজা রয়েছে, যার মধ্যে মাঝের দরজাটি তুলনামূলক বড়। মসজিদের ছাদে রয়েছে চারটি ছোট ছোট মিনার। মসজিদের ডিজাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মসজিদকে বেষ্টিত করা হয়েছে নিপূণ কারুকার্য খচিত প্রাচীর দিয়ে। প্রাচীরে রয়েছে ইসলামিক প্যাটার্নসংবলিত গ্রিল, ফলে বাইরে থেকেই মসজিদের আঙিনা স্পষ্ট দেখা যায়। তেমনি সূর্যের আলো প্যাটার্ন ভেদ করে মসজিদের আঙিনায় আঁকে আলোর আলপনা। মসজিদের সুবিশাল মূল ফটক মসজিদের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে। মসজিদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সম্ভবত পরবর্তী সময়ে এখানে একটি লোহার দরজা বানানো হয়েছে। মুসল্লি ও পর্যটকদের সুবিধার্থে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। মসজিদে আনা হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন। মানুষকে নামাজের দিকে আহ্বান করতে মসজিদের মিনারে লাগানো হয়েছে মাইক। প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে আগত বহু পর্যটক এই মসজিদ দেখতে আসে।