শহীদুল্লাহ ফরায়জী
(উৎসর্গ: ইরানের মেহদি কারামিকে)
হ্যালো বাবা, শুনতে পাচ্ছ
এইমাত্র রায় হয়েছে
আদালত আমাকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দিয়েছে
কিন্তু এই কথাটা মা’কে ব’লো না।
বিচারের নামে আমার হত্যাকাণ্ড
জন্মভূমির সবাই মেনে নেবে
শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘও মেনে নেবে
কিন্তু আমি জানি
মা মেনে নেবে না,
চিৎকারে কলিজা ছিঁড়ে ফেলবে
চোখের জল
বৃষ্টির মত
মাটিতে পড়বে
ক্রন্দন ধ্বনি
বাতাসে আছড়ে পড়বে
তবুও মা মেনে নেবে না।
বাবা, কথাটা তুমি গোপন রাখো
অতি দ্রুত রায় কার্যকর হবে,
কারা কর্তৃপক্ষ পরিবারের সাথে
শেষ দেখার সুযোগ দেবে
তুমি কিন্তু একা আসবে,
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পুত্রকে
গর্ভধারিনী মা
শেষ বিদায় জানাতে পারে না,
রাষ্ট্র, আদালত কর্তৃপক্ষ
সব কিছু জানে
শুধু এইটুকু জানে না।
বাবা, আমার কফিন
মা’র চোখে দৃশ্যমান ক’রো না
কোন এক অজ্ঞাত স্থানে
কবর দিয়ো।
মৃত্যুদণ্ড, কারাগার, নির্যাতন-
সরকারের ক্ষমতা উপভোগ
করার একটি পদ্ধতি মাত্র।
জানো, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে
আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য
আদালত মাত্র ১৫ মিনিট
সময় দিয়েছিল।
আমি জানি,
আত্মপক্ষ সমর্থন নয়
ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডে আদালত
সম্মতি আশা করে মাত্র,
তাই আমি কোন জবানবন্দি দিইনি
দ্রুত সম্মতি দিয়েছি,
আমি তো জানি
রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রদর্শনে
ভয়াবহ লজ্জাজনক ত্রুটিপূর্ণ বিচারেও
আমাকে ফাঁসিতে ঝুলানো
প্রজাতন্ত্রের জরুরী কর্তব্য,
এ বিচারালয় নয়
কসাইখানা।
বাবা, তুমি খেয়াল করেছো
আমার সৌভাগ্য কত
গ্রেফতারের পর ৬৫ দিন
বেঁচে আছি
অথচ মাহসা আমেনীকে
গ্রেফতারের তিন দিনের মধ্যে
হত্যা ক’রে
তাঁকে মৃত্যুহীন করেছে,
এরপরও ঘরে বসে থাকলে
জীবন নিয়ে বড় ধরনের
বাড়াবাড়ি হতো
ভিতরে বর্বরতম
দাসত্ব জন্ম নিতো।
জানো বাবা,
কী অদ্ভুত এই প্রজাতন্ত্র
এখানে পাখি হত্যা করা
যায় না
কিন্তু মানুষ হত্যা করা যায়
পাখির মত।
একদিন প্রহরীরা অচেতন অবস্থায়ও
আমাকে প্রচন্ড নির্যাতন করে,
আমি মৃতপ্রায়
কিন্তু মরে গেছি ব’লে
ধূসর ধুলায় ফেলে দিয়েছিল,
কাপুরুষের মত চুপ থাকতে পারিনি
বলেছি হে মানুষ, মানুষ হও
জেগে ওঠো
‘ন্যায়’কে মৃত্যুর উঁচুতে স্থান দাও।
২২ বছরের জীবন ঐশ্বর্যমন্ডিত
রাজপথে নামা ছাড়া
এ জীবন কোথায় লুকাবো?
বাবা, রাস্তায়-রাস্তায়
প্যাকেট জাত টিস্যু
ফেরি করা বন্ধ করো না,
শুধু প্রতিটি টিস্যুতে লিখে দিয়ো
‘প্রতিবাদ’- মানুষের একটাই পথ।
বাবা তুমি
জগতের সকল খবর
মা’কে বলবে,
শুধু আমার খবর ছাড়া।
হ্যাঁ, সময়ের পরিক্রমায়
কোন একদিন
মা’কে ব’লো
আমি কারাতে চ্যাম্পিয়ন ছিলাম
এখন মৃত্যতেও…
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
faraizees@gmail.com