Tuesday, March 28, 2023
spot_img
Homeলাইফস্টাইলমৃগী রোগকে নিয়ন্ত্রণে করণীয়

মৃগী রোগকে নিয়ন্ত্রণে করণীয়

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিশ্ব এপিলেপসি দিবস। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সোমবার আন্তর্জাতিক ব্যুরো অব এপিলেপসি এবং আন্তর্জাতিক লিগএগেনেস্ট এপিলেপসি যৌথভাবে এ দিনটি পালন করে আসছে। আমাদের দেশে প্রতিবছরের মতো এবারও কোভিডকালীন এ দিনটি পালিত হচ্ছে।

খিঁচুনি রোগ কী : মস্তিষ্ক-কোষ বা নিউরনের ত্বরিত বেগের (Electric Discharge ) অস্বাভাবিকতার কারণে যে কোনো ধরনের ক্ষণস্থায়ী শারীরিক প্রতিক্রিয়া বা বাহ্যিক লক্ষণকে খিঁচুনি বলা হয়। যদি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বা ততোধিকবার খিঁচুনি হয় তা হলে এটিকে মৃগীরোগ (Epilepsy) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মৃগীরোগ স্নায়ুতন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ। যে কোনো বয়সের পুরুষ ও নারী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশুদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অনেক ধরনের খিঁচুনি রোগ হয় যেমন- সারা শরীরে খিঁচুনি বা জেনারেলাইজড এপিলেপ্সি, শরীরের কোনো দিকের খিঁচুনি বা ফোকাল এপিলেপ্সি, শরীরের এক জায়গা থেকে শুরু হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাওয়া খিঁচুনি, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে সিনড্রোম আকারে খিঁচুনি রোগ আসতে পারে।

খিঁচুনি রোগের কারণ হিসেবে দেখা গেছে, পরিবারে এ রকম ইতিহাস থাকলে, গর্ভকালীন জটিলতা-জন্মের সময় অতিমাত্রায় ওজনের স্বল্পতা, জন্মের পরই শিশুর শ্বাস নিতে দেরি হওয়া বা কান্না করতে দেরি হলে। গর্ভকালীন মাথার আঘাতজনিত কারণে, জন্মের পরই জন্ডিসের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার জন্যও এ রোগ হয়ে থাকে, ছোটবেলায় কোনো কারণে মস্তিষ্কে ইনফেকশনের কারণে পরবর্তী সময়ে খিঁচুনি হতে পারে। এ ছাড়া অনেক অজানা কারণেও খিঁচুনি রোগ হতে পারে।

প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ শিশুর খিঁচুনি রোগের চিকিৎসা হয় ফকির, কবিরাজ (ট্রাডিশনাল হিলার) দ্বারা। ওষুধ দিয়ে ৭০-৮০ ভাগ রোগীর খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বাজারে অনেক ধরনের খিঁচুনি রোগের ওষুধ রয়েছে, যেমন- ফেনোবারবিটল, ফেনিটয়েন, ভ্যালপ্রোয়েট ইত্যাদি ওষুধ প্রায় সব ধরনের খিঁচুনি রোগের জন্যই কার্যকর। তবে এসব ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বর্তমানে নতুন ধরনের খিঁচুনিরোধক যে ওষুধ বাজারে এসেছে সেগুলো অধিকতর কার্যকরী এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। এসব ওষুধ অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

খিঁচুনি রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা গেছে : কুসংস্কার, অসচেতনতা, ওষুধের স্বল্পতা, ডাক্তারের স্বল্পতা, অধিক দামের ওষুধ। শিশুদের খিঁচুনি রোগীর জন্য সার্বিক উপদেশগুলো, যেমন- রোগীকে নিয়মিত ও নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ খাওয়ানো, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি খিঁচুনিকে বাড়িয়ে দিতে পারে তাই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করানো, আগুন এবং পানি থেকে এ ধরনের শিশুদের দূরে রাখা, পুকুরে ডুব দিয়ে গোসল করতে না দেওয়া, বাসায় বাথরুমে গোসল করলে দরজা লক না করা (সিটকানি বন্ধ না করা)। মনে রাখতে হবে এই রোগের ওষুধ কমপক্ষে ২-৩ বছর খিঁচুনি বন্ধ থাকলে (Seizure free) তবেই বন্ধ করা যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)। খিঁচুনি রোগীদের ক্ষেত্রে একটা কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে (কার্ডের মধ্যে রোগীর নাম, রোগের নাম, ওষুধের নাম ও পরিমাণ এবং পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে)। রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এমন কিছু করা যাবে না। যেমন- টেলিভিশন দেখা, মোবাইল দেখা ইত্যাদি।

শিশুদের এ রোগ প্রতিরোধ করার উপায় হলো, শিশুর জন্মের আগে গর্ভাবস্থায় মাকে নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপ করানো, গর্ভকালীন জটিলতা দূর করার জন্য ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে প্রসব করানো, পরিবারে এ ধরনের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত চেকআপ করা ইত্যাদি। কখনো কখনো খিঁচুনি রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে যদি খিঁচুনি যদি ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ খিঁচুনি চলতে থাকে। একবার খিঁচুনির পর জ্ঞান না ফেরে। বারবার খিঁচুনি হওয়া এবং মারাত্মক খিঁচুনি যদি ওষুধ দিয়েও নিয়ন্ত্রণে না থাকে।

খিঁচুনি রোগীর জরুরি অবস্থায় কিছু কিছু উপদেশ হলো : জোরপূর্বক দাঁত খোলার চেষ্টা না করা। শর্ট বা টাইট কাপড় পরা থাকলে ঢিলা করে দেওয়া। সম্ভব হলে রোগীকে আগুন, পানি থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে নেওয়া। রোগীর পাশে থাকা ধারালো জিনিস সরিয়ে ফেলা। রোগীকে পানি পান করানোর চেষ্টা না করা। রোগীর শরীরে বাতাস করা অথবা ফ্যানের ব্যবস্থা করা। খিঁচুনি আক্রান্ত ব্যক্তির চারদিকে ভিড় না করা। মনে রাখতে হবে বেশিরভাগ খিঁচুনি হঠাৎ শুরু হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর থেমে যায়।

সঠিক চিকিৎসায় মৃগী রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। এ ধরনের রোগীদের স্কুলে যেতে বাধা নেই। এ রোগ কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, তাই এ রোগীর বাড়িতে যেতে বাধা নেই। জগতে বিখ্যাত অনেক মানুষ যাদের মধ্যে আর্টিস্ট ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, বিজ্ঞানী সক্রেটিস, সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু তারা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে খিঁচুনি রোগকে জয় করতে পেরেছেন।

অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু : চেয়ারম্যান, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments