মূল্যস্ফীতি এখন শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই বিশেষ আলোচনা ও ভাবনার বিষয়। বিশ্বে মূল্যস্ফীতির পেছনে কাজ করছে একাধিক কারণ। এর কোনো কোনোটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সোমবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০-২১’ প্রকাশিত হয়েছে।
এ থেকে প্রাপ্ত তথ্যবিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই সময়ে তিন কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বেড়েছে। এগুলো হলো-করোনার প্রকোপ কমার পর হঠাৎ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়া। এসব কারণে চলতি অর্থবছরেও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চলমান ইউক্রেন সংকট। এ যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ও জোগান মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। কাজেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও পড়বে এর প্রভাব। বাংলাদেশও এ থেকে মুক্ত থাকবে না। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন থেকেই নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অর্থনীতির সব খাতে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন এবং এ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে কঠোরভাবে। সামনের দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বস্তুত এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আশার কথা, আমাদের অর্থনীতি এখনো আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় ভালো ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। করোনার অভিঘাতে দেশের অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, কৃষি ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। এ অবস্থায় বাজার ব্যবস্থাসহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই। বস্তুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দিতে হবে আরও মনোযোগ।
দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা মানুষের দুর্ভোগের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতির কারণে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাবের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির কারণেও দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। অর্থনীতির অন্যান্য খাতে তদারকির মতো বাজার ব্যবস্থায়ও কঠোর তদারকি নিশ্চিত হলে বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজি অন্তত বন্ধ হবে। জানা গেছে, আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৭ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে সভাপতি করে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’বিষয়ক এ টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, এ টাস্কফোর্সকে কাজ করতে হবে নিরপেক্ষভাবে ও সাহসিকতার সঙ্গে। তাদের কার্যক্রম যেন কোনোভাবেই একচোখা না হয়। টাস্কফোর্স যদি কেবল ছোট অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে বাজারে কারসাজি বন্ধ হবে না। ব্যবস্থা নিতে হবে বড় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার উদ্যোগী হবে, এটাই কাম্য।