Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeধর্মমুসলিম বিবাহে কুফু বা সমতাবিধানের গুরুত্ব

মুসলিম বিবাহে কুফু বা সমতাবিধানের গুরুত্ব

বিয়েতে সমতাবিধানকে আরবিতে ‘কুফু’ বলা হয়। ‘কুফু’র কোনো গুরুত্ব আছে কি? এ সম্পর্কে ইসলামের জবাব সুস্পষ্ট ও যুক্তিভিত্তিক। ‘কুফু’ মানে ‘সমতা ও সাদৃশ্য’। অন্য কথায়, বর ও কনের ‘সমান-সমান হওয়া’, একের সঙ্গে অন্যজনের সামঞ্জস্য হওয়া।

বিয়ের উদ্দেশ্য যখন স্বামী-স্ত্রীর মনের প্রশান্তি লাভ, উভয়ের মিলমিশ লাভের পথে বাধা বা অসুবিধা সৃষ্টির সামান্যতম কারণও যাতে না ঘটতে পারে, তার ব্যবস্থা করা একান্তই কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। তোমার রব সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৫৪)

ইমাম বুখারি (রহ.) বুখারি শরিফে এই আয়াতকে ‘কুফু’ অধ্যায়ের সূচনায় উল্লেখ করেছেন। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) তার কারণ উল্লেখ করে লিখেছেন, এই আয়াতকে এখানে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা জানিয়ে দেওয়া যে বংশ ও শ্বশুর-জামাতার সম্পর্ক এমন জিনিস, যার সঙ্গে কুফুর ব্যাপারটি সম্পর্কিত। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে যাতে ভবিষ্যৎ বংশ রক্ষার ব্যবস্থা হয়, সেই দৃষ্টিতে কুফু রক্ষা করা একটা জরুরি বিষয়।

কুফুর মানে যদিও সমান বা সদৃশ, তবু বিয়ের ব্যাপারে কোন কোন দিক দিয়ে এর বিচার করা আবশ্যক, তা বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) লিখেছেন, ‘কুফু’ ইসলামী বিশেষজ্ঞদের কাছে সর্বসম্মত ও গৃহীত। তবে সেটি প্রধানত গণ্য হবে দ্বিন পালনের ব্যাপারে। কাজেই মুসলিম মেয়েকে কাফিরের কাছে বিয়ে দেওয়া যেতে পারে না। এবং ব্যভিচারী পুরুষ ঈমানদার মেয়ের জন্য এবং ব্যভিচারী নারী ঈমানদার পুরুষের জন্য কুফু নয়।   কোরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তবে যে ব্যক্তি মুমিন, সে কি পাপাচারীর মতো? তারা সমান নয়। ’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ১৮)

অর্থাৎ মুমিন ও ফাসিক এক নয়। তাদের মধ্যে কোনো রকমের সমতা ও সাদৃশ্য নেই।

ইমাম শাওকানি (রহ.) লিখেছেন, দ্বিনদারি ও চরিত্রের দিক দিয়ে কুফু আছে কি না—বিয়ের সময়ে তা অবশ্যই লক্ষ করতে হবে।

ইমাম শাফিঈ (রহ) ধন-সম্পত্তির দৃষ্টিতেও ‘কুফু’র গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা এ কথা প্রমাণ করে না যে ধনী ও গরিবের সন্তানের মধ্যে পারস্পরিক বিয়ে হলে দাম্পত্যজীবনে তাদের সুখময় ভালোবাসার সৃষ্টি হতে পারে না। তবে এক তরফের ধন-ঐশ্বর্য ও বিত্ত-সম্পদের প্রাচুর্য অনেক সময় দাম্পত্যজীবনে তিক্ততারও সৃষ্টি করতে পারে—তা অস্বীকার করা যায় না।

ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফিঈ (রহ.) একটি হাদিসের ভিত্তিতে বংশীয় ‘কুফু’র গুরুত্ব স্বীকার করেছেন।

ইমাম খাত্তাবি (রহ.) লিখেছেন, বহুসংখ্যক মনীষীর মতে, চারটি কুফুর বিচার গণ্য হবে : দ্বিনদারি, স্বাধীনতা (আজাদি), বংশ ও শিল্প-জীবিকা। তাঁদের অনেকে আবার দোষত্রুটিমুক্ত ও আর্থিক সচ্ছলতার দিক দিয়েও কুফুর বিচার গণ্য করেছেন। ফলে কুফু বিচারের জন্য মোট দাঁড়াল ছয়টি গুণ।

হানাফি মাজহাবে ‘কুফু’র বিচারে বংশমর্যাদা ও আর্থিক অবস্থাও বিশেষভাবে গণ্য। এর কারণ এই যে বংশমর্যাদার দিক দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পার্থক্য হলে যদিও একজন অন্যকে ন্যায়সংগতভাবে ঘৃণা করতে পারে না, কিন্তু একজন অন্যজনকে অন্তর দিয়ে গ্রহণ করতে অসমর্থ হতে পারে—তা অস্বীকার করা যায় না। অনুরূপভাবে একজন যদি হয় ধনীর দুলাল আর একজন গরিবের সন্তান, তাহলে যদিও সেখানে ঘৃণার কোনো কারণ থাকে না, কিন্তু একজন যে অন্যজনের কাছে যথেষ্ট আদরণীয় নাও হতে পারে। এসব বাস্তবতা সামনে রেখে দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রের পাশাপাশি বংশমর্যাদা, জীবিকার উপায় ও আর্থিক অবস্থার বিচার হওয়াও অন্যায় কিছু নয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments