Friday, June 9, 2023
spot_img
Homeধর্মমুসলিম নগরী সামাররা: পরিকল্পিত নগরব্যবস্থার পথিকৃৎ

মুসলিম নগরী সামাররা: পরিকল্পিত নগরব্যবস্থার পথিকৃৎ

ইরাকের প্রাচীন নগরী সামাররা। রাজধানী বাগদাদ থেকে ১২৫ কিলোমিটার উত্তরে দজলা নদীর তীরে অবস্থিত। আব্বাসীয় খলিফা আল-মুতাসিম ঐতিহাসিক এই নগরীর ভিত্তি স্থাপন করেন। শহরটি প্রথমে গড়ে তোলা হয়েছিল আব্বাসীয় খেলাফতের তুর্কি সৈনিকদের জন্য।

যাদের সংখ্যা ছিল তিন হাজার এবং পরবর্তী সময়ে ১০ হাজারে উন্নীত করা হয়। সামাররা এক সময় আব্বাসীয় খেলাফতের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। এটিই একমাত্র শহর, যা এখনো তার মূল পরিকল্পনা, স্থাপত্য ও শৈল্পিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে পেরেছে। ২০০৭ ইউনেসকো সামাররাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।

৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা আল-মুতাসিম দজলা নদীর তীরে নতুন রাজধানীর গোড়াপত্তন করেন। সেখানে বিস্তৃত প্রাসাদসারি নির্মাণ করেন। এসব প্রাসাদ তাঁর বিশেষ রক্ষী বাহিনীর সামরিক আবাস দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বিশেষ এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল মধ্য এশিয়া ও ইরানের যোদ্ধা জাতিগুলোর সৈনিক দ্বারা। যেমন তুর্কি, খোরাসানি ইসখানিয়া, ফারগানিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার মাগরিবিয়া ইত্যাদি। সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এসব সেনা অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল।

পরবর্তী সময়ে খলিফা মুতাওয়াক্কিলের শাসনামলে সামাররা আরো উন্নত হয়। তিনি এখানে ‘আল-মুতাওয়াক্কিলিয়া’র মতো সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করেন, ৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে সামারা মসজিদ নির্মাণ করেন, যা তার সর্পিল মিনারের জন্য বিখ্যাত এবং তার ছেলে আল-মুতাজের জন্য বুলকুওয়ারা প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ৮৯২ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আল-মুতাদিদ বাগদাদকে পুনরায় রাজধানীর মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত সামাররা ছিল খলিফাদের আবাসস্থল। শহরটি রাজধানীর মর্যাদা হারালেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি প্রাশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে তা ব্যবহৃত হয়েছে। ১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে একটি টাকশাল চালু ছিল। আব্বাসীয় শাসনের শেষভাগে সামাররা পরিত্যক্ত হয়। ৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তা প্রায় পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়। সামাররার বাসিন্দারা বাগদাদে ফিরে যায়। এখন সামাররা গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্য, নগর সভ্যতা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মাত্র। ১৭৩০-১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে পারস্য ও উসমানীয়দের ভেতর সংঘটিত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ক্ষেত্র ছিল সামাররা। এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার সৈনিকের প্রাণহানি ঘটে। এরপর থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ইরাক উসমানীয়দের শাসনাধীন ছিল।

সামাররা ছিল একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর। আব্বাসীয় আমলের প্রথম পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পিত নগর এটি। পুরো শহরজুড়ে ছিল বিস্তৃত সড়ক ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখানে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় সাধারণ আবাসন ব্যবস্থা, প্রাসাদ, প্রাসাশনিক ভবন, বাজার, হাম্মাম, মসজিদ, মাদরাসা, বাগান, টাকশাল, সুপেয় পানির জলাধার, সামরিক স্থাপনা ইত্যাদি। নতুন রাজধানী নির্মাণের জন্য মুসলিম বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নির্মাণ সামগ্রী ও কারিগর-শ্রমিক আনা হয়। খলিফার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আছে ঘোড়ার দুটি ‘রেসট্রাক’, ছয়টি প্রাসাদ কমপ্লেক্স, কমপক্ষে ১২৫টি মৌলিক ভবন। দজলার তীরে প্রায় ২৫ বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে এসব ভবন। প্রাসাদ ও ভবনের অসাধারণ কারুকাজ ও নির্মাণশৈলী এখনো মানুষের মনে বিস্ময়ের জন্ম দেয়।

সূত্র : থককো ডটকম ও ব্রিটানিকা ডটকম

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments