Tuesday, March 28, 2023
spot_img
Homeধর্মমুসলিম আমলে উপমহাদেশে ভূমির শ্রেণিবিন্যাস

মুসলিম আমলে উপমহাদেশে ভূমির শ্রেণিবিন্যাস

উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাস গবেষক মাওলানা সাইয়েদ আবদুল হাই লাখনভি (রহ.) তাঁর ‘আল-হিন্দ ফিল-আহদিল ইসলামি’ গ্রন্থে মুসলিম শাসনামলে উপমহাদেশের নিম্নোক্ত ভূমিবিন্যাস তুলে ধরেছেন। তিনি লেখেন, অধিগ্রহণ ও বরাদ্দের বিবেচনায় মুসলিম শাসকরা উপমহাদেশের ভূমিকে নিম্নোক্ত শ্রেণিতে ভাগ করেছিলেন। তা হলো :

১. খালিসাতুশ শরিফা : যে ভূমির আয় স্বয়ং বাদশাহ গ্রহণ করতেন এবং তাঁর নামে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ভূমি আয় জমা হতো। কেন্দ্রীয় প্রশাসন এমন ভূমি নিয়ন্ত্রণ করত।

২. সিরফে খাস : এমন ভূমি, যার আয় বাদশাহর ব্যক্তিগত ভাণ্ডারে যুক্ত হতো। এটা থেকেই বাদশাহর পোশাক, খাবার, সেবকদের খরচ নির্বাহ করতেন।

৩. বায়েগা : এমন ভূমি আমিরদের (আঞ্চলিক প্রশাসক) প্রদান করতেন সেনাবাহিনী ও প্রশাসন পরিচালনার জন্য।

৪. জায়গির : বিশেষ ধরনের বরাদ্দ ও দান। জায়গির আবার তিন ভাগে বিভক্ত ছিল :

ক. তোহফা : যা বাদশাহ কোনো হকদারকে প্রদান করতেন। এই ব্যক্তির ওয়ারিশরাও তা লাভ করত।

খ. জাত জায়গির : যা শুধু ব্যক্তির জন্যই বিশেষায়িত ছিল। ব্যক্তির ওয়ারিশরা তা ভোগ করতে পারত না।

গ. তানখাহ মহল্লাত : যা কোনো ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের বিপরীতে প্রদান করা হতো।

৫. ইনাম : যা বাদশাহ কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ বা সেবার প্রতিদান হিসেবে উপহার দিতেন। এর পরিমাণ হতো একটি গ্রামের চেয়ে কম।

আর রাজস্ব আদায়ের বিবেচনায় তাঁরা ভূমিকে ছয় ভাগে বিভক্ত করেছিলেন।

৬. পেশকাশ : যে ভূমি বাদশাহ আঞ্চলিক প্রশাসক বা শাসকদের হাতে ছেড়ে দিতেন এবং তা থেকে নির্ধারিত হারে রাজস্ব আদায় করতেন। ভূমির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রশাসক বা শাসকদের হাতেই থাকত এবং উৎপাদন যে পরিমাণেই হোক না কেন তারা একই পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করত।

৭. সেরবাস্তাহ : এটিও নির্ধারিত রাজস্বের বিনিময়ে প্রশাসকদের হাতে ন্যস্ত ভূমি। তবে পরিমাণে তা পেশকাশ থেকে কম।

৮. বন : এটাও সেরবাস্তাহর মতো একটি নির্ধারিত রাজস্বের বিনিময়ে প্রশাসকের হাতে ন্যস্ত ভূমি। তবে পরিমাণে তা সেরবাস্তাহর চেয়ে কম।

৯. আকরাহার : যে ভূমি অমুসলিমদের মন্দিরের নামে বরাদ্দ দেওয়া হতো। মন্দিরের পুরোহিতরা তা নিয়ন্ত্রণ করত। উপহার হিসেবে নামমাত্র রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হতো।

১০. মুকাসা : যে ভূমি মুসলিম শাসকরা মালিকের হাতেই ছেড়ে দিতেন এবং উৎপাদিত ফসলের নির্ধারিত অংশ গ্রহণ করতেন (সম্ভবত এর দ্বারা উশরি ভূমি উদ্দেশ্য)।

১১. উমলি : এটা মুকাসার মতোই এক ধরনের ভূমি। তবে পার্থক্য হলো, এই ধরনের ভূমির মালিকানা শুধু স্থানীয় ও স্বদেশিরাই লাভ করত। সম্ভবত এর দ্বারা খিরাজি ভূমি উদ্দেশ্য। (আল-হিন্দ ফিল-আহদিল ইসলামি, পৃষ্ঠা ৩২৭-৩২৮)

এ ছাড়া ঐতিহাসিকরা আরেকটি প্রকার ভূমির উল্লেখ করেন। তা হলো :

১২. ওয়াকফ : এমন ভূমি রাষ্ট্র বা ব্যক্তি, যা মুসলমানের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যা দান করত। এজাতীয় ভূমি ছিল করমুক্ত। এমন ভূমির আয় দ্বারা অসংখ্য মাদরাসা, মসজিদ, খানকাহ, এতিমখানা, হাসপাতাল ইত্যাদি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আয় নির্বাহ করা হতো।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments