Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeধর্মমুসলমান যেভাবে ধীরে ধীরে ঈমানহারা হয়

মুসলমান যেভাবে ধীরে ধীরে ঈমানহারা হয়

ঈমান অনেকগুলো আকিদা-বিশ্বাসের সমষ্টি। এগুলোর বিপরীত কোনো বিশ্বাস, চেতনা বা কথায়-কাজে জড়ালে মুসলমান ঈমানহীন হয়ে পড়ে। ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে তার সম্পর্ক হালকা হয়ে যায়। ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে সে কাফির হয়ে যায়।

অজু ভঙ্গের কারণ পাওয়া গেলে যেভাবে অজু ভেঙে যায়, অনুরূপ ঈমান ভঙ্গের কারণ পাওয়া গেলেও ঈমান ভেঙে যায়। তাওবা না করে মারা গেলে এমন ব্যক্তি কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

কেউ ইসলামের কোনো বিধানকে অবজ্ঞা করলে কাফির হয়ে যায়। এমনকি যদি সে ওই বিধান অনুযায়ী আমলও করে থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা এ জন্য যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দেবেন। ’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ৯)

অর্থাৎ তাদের ভালো কাজগুলোও পরকালে কাজে আসবে না।

আল্লাহর দ্বিন থেকে বিমুখ হয়ে থাকা কুফুরি কাজ। যারা আল্লাহর দ্বিন ও দ্বিনের বিধি-নিষেধের কোনো তোয়াক্কা করে না, তারা ধীরে ধীরে ঈমানহীন হয়ে পড়ে। তাদের অন্তর ধীরে ধীরে মরে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে আর বড় জালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দেওয়া হয় অথচ সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? অবশ্যই আমি (আল্লাহ) অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। ’ (সুরা আস-সাজদাহ, আয়াত : ২২)

দ্বিন-ধর্ম সম্পর্কে আহৃত জ্ঞান অনুযায়ী না চললে অন্তরের অন্ধত্ব চলে আসে। এমন লোকের অন্তর মরে যায়। এবং সে ঈমান ও আমলহীন হতে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন, আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান?

তিনি (আল্লাহ) বলবেন, এভাবেই আমার নিদর্শন তোমার কাছে এসেছিল; কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আর এভাবেই আজ তুমিও বিস্মৃত হলে। ’ (সুরা : ত্বা-হা, আয়াত : ১২৪-১২৬)

কোনো ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করে যে মানবরচিত আইন-কানুন ইসলামী বিধানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অথবা তা ইসলামী শরিয়তের সমপর্যায়ের, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

কেউ যদি মনে করে যে বিংশ শতাব্দীর এ যুগে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা অসঙ্গত কিংবা ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করলে মুসলিমরা এ কারণে পিছিয়ে পড়বে, এমন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে।

অনুরূপ কোনো ব্যক্তি যদি মনে করে যে চোরের হাত কাটা এবং বিবাহিত ব্যভিচারকারীকে পাথর মেরে হত্যা করার বিষয়ে আল্লাহর বিধান বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য নয়, তাহলে সে ঈমানহীন হয়ে যাবে। অপরিহার্যভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে যেসব বস্তু হারাম যেমন—জিনা-ব্যভিচার, মদপান, সুদ, আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্যের বিধান দিয়ে ফয়সালা করা ইত্যাদি যা আল্লাহ হারাম করেছেন তা যদি কোনো ব্যক্তি বৈধ মনে করে, তাহলে ওই ব্যক্তি সর্বসম্মতিক্রমে কাফির বলে বিবেচিত হবে।

রাশিচক্র ও গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব বিশ্বাস করা কুফরি ও শিরকি কাজ। (বুখারি, হাদিস : ১২৭)

হস্তরেখা বিচার বিদ্যার মাধ্যমে রেখা ইত্যাদি দেখে ভূত-ভবিষ্যতের শুভ-অশুভ সম্পর্কে বিশ্লেষণ দেওয়া এবং এগুলো বিশ্বাস করা কুফরি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩০)

কোনো কিছুকে কুলক্ষণ মনে করা কুফুরি। (বুখারি, হাদিস : ৫৭১৭)

অমুসলিমদের উপাসনালয়ে গমন ও তাদের পূজা-অর্চনায় অংশগ্রহণ ঈমানবিধ্বংসী কাজ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৮৫)

দাড়ি-টুপি নিয়ে উপহাস করলে ঈমানহারা হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে বাজ্যাজিয়া ৬/৩৩৭)

দ্বিনের ধারক-বাহক হওয়ায় উলামায়ে কেরামকে হেয় প্রতিপন্ন করা বা কটাক্ষ করা কুফরি। হ্যাঁ, পার্থিব বিষয়ে তাদের কারো কোনো ব্যক্তিগত কর্মের কারণে কটাক্ষ করার দ্বারা কাফির হবে না। (আল-বাহরুর রায়েক ৫/১২৩)

কোরআন শরিফের অবমাননা করা বা পুড়িয়ে ফেলা বা ছিঁড়ে ফেলা স্পষ্ট কুফরি। (আল-বাহরুর রায়েক ৫/১২০)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ছবি ও ব্যঙ্গচিত্র আঁকা কুফুরি কাজ। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৮৬)

মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments