Friday, September 29, 2023
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমুশকিল আসানে ১০ পোর্টেবল অ্যাপ

মুশকিল আসানে ১০ পোর্টেবল অ্যাপ

প্রায় সময়ই আমাদের নিজস্ব পিসি বা ল্যাপটপের বাইরেও অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসি ব্যবহার করতে হয়। সেসব ক্ষেত্রে নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহারের উপায় থাকে না। এ ক্ষেত্রে সহজেই পেনড্রাইভে কিছু পোর্টেবল সফটওয়্যার রেখে দেওয়া যেতে পারে, যা সরাসরি ড্রাইভ থেকেই চলবে, ইনস্টলের নেই কোনো বালাই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ

লিব্রে অফিস

মাইক্রোসফট অফিসের জনপ্রিয় বেশির ভাগ ফিচার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ ফ্রি অফিস স্যুট, লিব্রে অফিস। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল এবং পাওয়ার পয়েন্টের চমৎকার বিকল্প অ্যাপ আছে এই স্্যুটটিতে। তবে ইন্টারফেসটি বর্তমান অফিসের মতো নয়, বরং পুরনো ২০১০ সংস্করণের মতো করা হয়েছে। তবে দ্রুত ডকুমেন্ট তৈরি ও এডিট করা বা স্প্রেডশিট নিয়ে কাজ করার জন্য লিব্রে অফিস যথেষ্ট। প্রেজেন্টেশন তৈরি করার টুলসে অবশ্য কিছুটা ঘাটতি আছে। তবে এ স্যুটটি ব্যবহার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে এটি নিজস্ব ফরম্যাটে ফাইল সেভ না করে মাইক্রোসফট অফিসের ডক বা এক্সএলএস ও পিপিটিএক্স ফরম্যাটে সেভ করে। না হলে ফাইলগুলো অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে সমস্যা হবে। বিজয় ফন্ট নিয়ে কাজ করলে অবশ্য কিছুটা সমস্যা হতে পারে। স্যুটটি পাওয়া যাবে সরাসরি libreoffice.org mvBU থেকে।

ব্রেভ ব্রাউজার

শেয়ার করা পিসিতে ব্রাউজার ব্যবহার করা অনিরাপদ, তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক। সে জন্য পোর্টেবল ব্রাউজার পেনড্রাইভে রাখলে যেকোনো পিসিতেই নিজস্ব নিরাপত্তায় ব্রাউজিং করা যেতে পারে। ফায়ারফক্স বা ক্রোম ব্রাউজারও চাইলে পোর্টেবল করে ব্যবহার করা সম্ভব, তবে ব্রেভ ব্যবহারের বড় সুবিধা এর মধ্যে থাকা বিল্ট-ইন অ্যাড ব্লকিং। ওয়েবসাইটের সব অ্যাড বন্ধ করার পাশাপাশি ইউটিউবেরও বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পারে ব্রেভ। ফলে ব্রাউজিং করা যায় দ্রুত এবং কম ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে। এর পাশাপাশিও ক্রোম এক্সটেনশনগুলোও ব্রেভ ব্রাউজারে ব্যবহার করা যায় এবং সরাসরি টরেন্টও ডাউনলোড করা যায় ব্রেভ ব্যবহার করেই। পাওয়া যাবে portapps.io সাইট থেকে।

এমসিসফট ইমার্জেন্সি কিট

পিসিতে ভাইরাস হামলা করলে সেটা উদ্ধারের জন্য এ সফটওয়্যারটি খুবই কাজের। ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারের খোঁজে ফাইল স্ক্যান, ঝুঁকিপূর্ণ ফাইল কোয়ারেন্টিন করা, ভাইরাস পরিষ্কার করা এবং নতুন আগত ফাইল মনিটর করার মতো সব অ্যান্টিভাইরাস ফিচার এ সফটওয়্যারটির আছে। সবচেয়ে ভালো দিক, ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট সংযোগও প্রয়োজন নেই। ভাইরাস ডাটাবেইস সফটওয়্যারটি অফলাইনে সংরক্ষণ করে থাকে। তবে ব্যবহারকারীদের উচিত অন্তত মাসে একবার ডাটাবেইস আপডেট করা, কেননা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ভাইরাস আবিষ্কার করছে এমসিসফট এবং সেটা ডাটাবেইস আপডেটে যুক্ত করা হচ্ছে। সফটওয়্যারটির ব্যক্তিগত ব্যবহার ফ্রি। পাওয়া যাবে সরাসরি emsisoft.com সাইট থেকে।

অভ্র

কম্পিউটারে বাংলা লেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার অভ্র কিন্তু চাইলে ইনস্টল না করে সরাসরি পেনড্রাইভ থেকেও চালানো যায়। সে জন্য অভ্রর ওয়েবসাইট omicronlab.com থেকে পোর্টেবল সংস্করণ ডাউনলোড করে নিলেই হবে। অভ্র চালু করে, এরপর F12 চাপলেই ইংরেজি হরফে বাংলা ট্রান্সলিটারেশনে টাইপ করা যাবে। চাইলে ট্রান্সলিটারেশনের বদলে ফিক্সড লে আউট যেমন প্রভাতেও টাইপ করা যাবে। সঙ্গে থাকছে ইউনিকোডের পাশাপাশি অ্যানসিতে টাইপ করার সুবিধা এবং বাংলা বানান পরীক্ষার টুলস।

কিউইক্স রিডার

কিউইক্স প্রজেক্টটির শুরু হয়েছিল ইন্টারনেট ছাড়াই পেনড্রাইভে, যাতে পুরো উইকিপিডিয়া রেখে সেটা ব্রাউজ করা যায় সেই লক্ষ্যে। আজ শুধু উইকিপিডিয়াই নয়, টেডেক্স থেকে শুরু করে উইভার্সিটি, বাউন্ডলেস কোর্সেস, নানাবিধ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের উইকি, উইকিভয়েজ ও অন্যান্য তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইটের অফলাইন ডাটাবেইসও কিউইক্সের মাধ্যমে ব্রাউজ করা যায়। বর্তমানে উইকিপিডিয়ার ডাটাবেইসটির আকৃতি প্রায় ৫০ গিগাবাইট, অর্থাৎ ৬৪ গিগাবাইট পেনড্রাইভে অনায়াসে ডাটাবেইস এবং কিউইক্স রিডারের পোর্টেবল সংস্করণ রেখে দেওয়া যাবে। ডাটাবেইস এবং সেটি ব্রাউজ করার সফটওয়্যার দুটিই পাওয়া যাবে kiwix.org সাইটে।

গিম্প

ছবি সম্পাদনার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার এডোবি ফটোশপ। তার বেশির ভাগ ফিচার এবং বাড়তি কিছু নিজস্ব টুলস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জিএনইউ ইমেজ ম্যানিপুলেশন প্রগ্রাম বা সংক্ষেপে গিম্প। তারই পোর্টেবল সংস্করণ পাওয়া যাবে portableapps.com সাইট থেকে। যেকোনো ছবিকে বিভিন্ন লেয়ারে বিভক্ত করে তার কিছু অংশ মুছে দেওয়া, কেটে অন্য কোথাও পেস্ট করা, রং বদলানো থেকে শুরু করে পারসপেক্টিভ পরিবর্তন বা এমনকি একাধিক ছবি একত্র করে নতুন আর্ট তৈরির মতো সব ধরনের এডোবি ফটোশপের কাজ সবই ফটোশপের মতোই ইন্টারফেসে করা সম্ভব গিম্প ব্যবহার করে। তবে এআই ফিল্টার বা অন্যান্য ফিচার যেগুলো এডোবি ক্লাউড ছাড়া করা সম্ভব নয়, সেগুলো গিম্পে পাওয়া যাবে না। ফটো এডিট করার পাশাপাশি ডিজিটাল ক্যামেরা বা স্ক্যানার থেকেও ছবি ইম্পোর্ট করতে পারে গিম্প।

এইচডাব্লিউ মনিটর

পিসির সব কিছু ঠিকঠাক চলছে কি না সেটা খেয়াল রাখার জন্য এইচডাব্লিউ মনিটর খুবই কাজের। পিসিতে কী কী হার্ডওয়্যার আছে, সেগুলো কতটুকু পাওয়ার ব্যবহার করছে, প্রতিটি অংশের তাপমাত্রা কত, কোনো ড্রাইভে সমস্যা আছে কি না বা প্রসেসর ও জিপিউ সঠিক স্পিডে কাজ করছে কি না—এমন নানাবিধ খুঁটিনাটি তথ্য পাওয়া যাবে এই অ্যাপটি থেকে। প্রতিদিন এর প্রয়োজন হয়তো নেই, কিন্তু পিসি যদি ঘন ঘন ক্র্যাশ বা রিস্টার্ট করে, হয়ে থাকে অতিরিক্ত স্লো তখন পেনড্রাইভ থেকে অ্যাপটি চালিয়ে সহজেই সমস্যা কোথায় তা নির্ণয় করা যাবে। পাওয়া যাবে portablefreeware.com সাইট থেকে।

সেভেনজিপ

ছোট এই টুলটি দিয়ে সব ধরনের কমপ্রেস করা ফাইল নিয়ে কাজ করা যায়। জিপ, রার, সেভেনজিপ, টার বা জি-জিপ যেটাই হোক না কেন, সব ফাইল সেভেনজিপ দিয়ে খোলা যায়। নতুন করে আর্কাইভ তৈরিতেও সেভেনজিপ চমৎকার। এর পাশাপাশি আর্কাইভে ড্যামেজ আছে কি না সেটা সিগনেচার পরীক্ষাও করা যায় এর মাধ্যমে। সফটওয়্যারটির পোর্টেবল সংস্করণ পাওয়া যাবে portableapps.com থেকে।

থান্ডারবার্ড

এ যুগে ই-মেইল ক্লায়েন্টের ব্যবহার কমে গেছে অনেকটাই। তার পরও নিরাপদে ই-মেইল চালাচালি করা এবং ইনবক্সের সব মেইল অফলাইনে ব্যবহার করার জন্য থান্ডারবার্ডের জুড়ি নেই। বিশেষ করে পোর্টেবল সংস্করণ portableapps.com থেকে ডাউনলোড করে পেনড্রাইভে রেখে দিলে যেকোনো পিসিতে বসেই চট করে ই-মেইল আদান-প্রদান সেরে নেওয়া যাবে ব্রাউজারে লগইন করার ঝুঁকি না নিয়ে। সহজেই। যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য পোর্টেবল থান্ডারবার্ড সেটআপ থাকলে ঝামেলা কমবে অনেকটা। আর পকেটে সব ই-মেইল থাকলে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর না করেও মেইলের তথ্য নিয়ে কাজ করা যাবে।

ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার

সব ধরনের অডিও ও ভিডিও ফাইল চালানো, ইন্টারনেট থেকে ভিডিও স্ট্রিম করা, এমনকি মিডিয়া ফাইল রূপান্তরের মতো সব কাজ ভিএলসি দিয়েই করা যায়। সফটওয়্যারটি ব্যবহারেও নেই কোনো ফি, আর সেটার পোর্টেবল সংস্করণ পেনড্রাইভে অডিও-ভিডিও ফাইলের পাশাপাশি রেখে দিলে শুধু ড্রাইভটি থাকলেই পিসিতে সেগুলো দেখা ও শোনা যাবে। সফটওয়্যারটি portableapps.com থেকে ডাউনলোড করা যাবে। ভিএলসি চালু করে পরে ফাইল অপশন থেকে মিডিয়া ফাইল খোলা যাবে বা স্ট্রিম অপশনে গিয়ে স্ট্রিমিং ভিডিওর লিংক পেস্ট করে দিলেই চলবে। আর কনভার্ট অপশনে গিয়ে ভিডিও বা অডিও ফাইল নির্বাচন করে কী ফরম্যাটে রূপান্তর করা লাগবে, সেটা নির্বাচন করলেই কনভার্ট হয়ে যাবে ফাইল।

যেভাবে পাওয়া যাবে

দুটি ওয়েবসাইট থেকে চট করে পোর্টেবল সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যাবে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে portableapps.com। তবে নতুন প্রজেক্ট portapps.io এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। বিশেষ করে পোর্টঅ্যাপসে সফটওয়্যার তৈরির আইডিই, যেমন : অ্যানড্রয়েড স্টুডিও, ভিজ্যুয়াল স্টুডিও বা ডকারের পাওয়া যাবে পোর্টেবল সংস্করণ। তবে সে ক্ষেত্রে পেনড্রাইভের বদলে এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক বা এসএসডি ব্যবহার করা শ্রেয় হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments