Sunday, September 24, 2023
spot_img
Homeধর্মমুমিনের দোয়া কখনো বিফলে যায় না

মুমিনের দোয়া কখনো বিফলে যায় না

দোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাই দোয়ার ফল পেতে দেরি হলে হতাশ হওয়া অনুচিত। হাদিস শরিফে আছে, ‘যখন কোনো মুসলমান দোয়া করে, যদি তার দোয়ায় গুনাহের কাজ কিংবা সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তিনটি প্রতিদানের যেকোনো একটি অবশ্যই দান করেন। সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দিয়ে দেন।দোয়ার কারণে কোনো অকল্যাণ বা বিপদ থেকে হেফাজত করেন অথবা আখিরাতের কল্যাণের জন্য তা জমা করে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১১১৪৯)

দোয়া কবুলে বিলম্ব হলেও দোয়া করা থেকে বিরত থাকা যাবে না। কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি ধারাবাহিক তা চালিয়ে যেতে হবে। নিম্নে দোয়া কবুলে বিলম্ব হলে মুমিনের করণীয় কয়েকটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হলো—

আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা

আল্লাহ কার দোয়া কবুল করবেন আর কার দোয়া কবুল করবেন না, এটা সম্পূর্ণ তাঁর ইচ্ছাধীন।কারণ তিনি কাউকে কিছু দিলে সেটা যেমন হিকমতপূর্ণ, আবার কাউকে বঞ্চিত রাখলে তাও প্রজ্ঞাপূর্ণ। সুতরাং অদৃশ্য হিকমতের অপেক্ষায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীল হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই তোমরা এমন বহু কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর অবশ্যই এমন বহু কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সব কিছু জানেন; কিন্তু তোমরা জানো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৬)

ইমাম সুফিয়ান ছাওরি (রহ.) বলেন, বান্দাকে না দেওয়াটাও একটা দান। এটা এ জন্য যে তিনি তাকে কৃপণতা ও অন্য খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন। মূলত, তিনি বান্দার কল্যাণের দিকে লক্ষ রাখেন। অতঃপর তাকে না দেওয়াটাও কল্যাণকর বিষয়।’ (মাদারিজুস সালিকিন, পৃষ্ঠা ২/২১৫)

ধৈর্য ধারণ করা

দোয়া কবুলে বিলম্ব হলে মুমিনের উচিত ধৈর্য ধারণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)

কল্যাণ দ্বারা পরীক্ষিত হলে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং মসিবত দ্বারা পরীক্ষিত হলে ধৈর্য ধারণ করা। সুতরাং বিপদের সময় দীর্ঘ হলে সাবধান থাকা এবং অধিক পরিমাণে দোয়া করা। এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) ধৈর্যশীল মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটি বড়ই বিস্ময়কর। তার সমস্ত বিষয়টিই কল্যাণময়। মুমিন ব্যতীত আর কারো জন্য এরূপ নেই। যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে শুকরিয়া আদায় করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যখন তাকে অকল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে সবর করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

কারণ অনুসন্ধান ও পাপকর্ম বর্জন করা

দোয়া দেরিতে কবুল হলে তার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। কারণ কখনো দোয়াকারীর ভুলের কারণে দোয়া কবুল হয় না, কখনো নিষিদ্ধ কোনো পাপাচারে জড়িত থাকায় তা কবুল হয় না। তাই দোয়া কবুলের জন্য কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি পাপকাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বস্তুত যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কর্ম সহজ করে দেন।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৪)

দোয়ায় আরো বেশি মনোযোগী হওয়া

মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতসমূহের একটি হলো দোয়া। আল্লাহ চান তাঁর বান্দারা যেন মর্যাদাপূর্ণ এই ইবাদতটি অত্যন্ত ভাবগম্ভীরতার সঙ্গে পূর্ণ করে। এ জন্য মাঝেমধ্যে তিনি দোয়াকে দেরিতে কবুল করে তাদের এদিকে মনোযোগী করেন। এটা বান্দার জন্য পরীক্ষাও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দার মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন তখন দুনিয়ায় তাকে অতি তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করেন। আর যখন তিনি কোনো বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তার গুনাহর শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে কিয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন কোন সমপ্রদায়কে ভালোবাসেন তখন তাদের তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি থাকে। আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)

সুতরাং বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করতে হবে। কেননা তিনিই একমাত্র জানেন বান্দার কল্যাণ কোথায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments