Monday, March 27, 2023
spot_img
Homeধর্মমুমিনের চিন্তা ও গবেষণার ক্ষেত্র

মুমিনের চিন্তা ও গবেষণার ক্ষেত্র

মানুষের স্বাধীন চিন্তাশক্তি আল্লাহ প্রদত্ত একটি নিয়ামত। কল্যাণকর কাজে এই শক্তি ব্যয় করা উচিত। ভালো কাজে চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। মহাবিশ্বের যেকোনো ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ সৃষ্টির চিন্তা ও গবেষণা মানুষকে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভে সক্ষম করে তোলে, যা মানুষকে তার পূর্ণ আনুগত্যে অবিচল থাকার প্রেরণা জোগায়। কোরআন-হাদিসে  চিন্তা ও গবেষণার নানা মাত্রা ও ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে এর কয়েকটি তুলে ধরা হলো—,

নিজেকে নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা,

নিজের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ প্রত্যেক মানুষের মাঝে মহান আল্লাহ অসংখ্য অগণিত নিদর্শন রেখেছেন। এ জন্যই মহান আল্লাহ নিজেকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আর নিদর্শন রয়েছে তোমাদের মধ্যেও, তোমরা কি দেখো না?’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৮),

আকাশ ও জমিন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা

মহান আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে রহস্যময় এক সৃষ্টির নাম আকাশ ও জমিন। সুনিপুণ আকাশ, শস্য ও বসবাস উপযোগী জমিনের দিকে তাকালে নির্দ্বিধায় বলা যায় এই সৃষ্টি কেবল আল্লাহর। মহান আল্লাহর বাণী—‘আমি তোমাদের মাথার ওপর মজবুত সপ্ত-আকাশ এবং একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি। আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ ও পাতাঘন উদ্যান।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ১২-১৬),,

কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা,

পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বান্দার জন্য চিন্তা-ভাবনার অগণিত উপাদান সংরক্ষিত আছে। চিন্তাশীল পাঠক খুব সহজেই বুঝতে পারবে যে কোরআনের প্রতিটি আয়াতে অপরিমেয় উপদেশ ও ভাবনার খোরাক সঞ্চিত আছে। তাই তো তিলাওয়াতের পাশাপাশি অর্থ অনুধাবনে সচেতনতা জরুরি। কারণ অর্থ অনুধাবন ছাড়া সঠিক উপলব্ধি সম্ভব নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে কি তারা কোরআন অনুধাবন করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলো তালাবদ্ধ?’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ২৪),

আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা
আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত নিয়ে চিন্তাভাবনা করা, এটা শুকরিয়া আদায়ের অন্তর্ভুক্ত। উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর নিয়ামত নিয়ে চিন্তা করা শ্রেষ্ঠ ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম।’ (ফাজলুল খিতাব ফিজ জুহদি ওয়ার রাকায়েক : ৫/১২৪)

হালাল ও হারাম বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা,

একজন মুমিনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় তথা জীবনের যেকোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের আগে ভালো-মন্দ এবং হালাল-হারামের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। বিশেষ করে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে চিন্তার অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। অন্যথায় পাপের গভীর জলে নিমজ্জিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেন, ‘এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ কোনো পরোয়া করবে না যে সে কোত্থেকে উপার্জন করছে। সেটা হালাল পথে, নাকি হারাম পথে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৫৯),

দুনিয়া ও আখিরাত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা,

দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। এটা চিন্তার ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! দুনিয়ার সঙ্গে আখিরাতের পার্থক্য এতটুকুই যে তোমাদের কেউ সাগরের মাঝে তার আঙুলটা ডুবিয়ে দিক। তারপর দেখুক সে আঙুলে কতটুকু পানি তুলে আনতে পারে।’ (মুসলিম হাদিস : ২৮৫৮)

অর্থাৎ বিশাল পানিরাশির সেই মহাসমুদ্র হলো তার আখিরাতের জীবন এবং আঙুলের সঙ্গে লেগে থাকা অতি নগণ্য পানিটুকু তার দুনিয়ার জীবন।

মৃত্যু নিয়ে চিন্তা,

মৃত্যু অনিবার্য। প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে কার মৃত্যু কোন অবস্থায় হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। তাই সুন্দর মৃত্যুর আশা নিয়ে যার চিন্তা যত বেশি হবে, তার জীবন তত পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও গোছালো হবে। এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সবচেয়ে বুদ্ধিমান মুমিন কারা?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘যারা মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তম প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৯),

মহান আল্লাহর নির্দেশিত বিষয়ে আমাদের চিন্তা ও গবেষণা করার তাওফিক দান করুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments