মুনকার ও নাকির (অস্বীকারকারী ও তিরস্কারকারী) দুজন ফেরেশতার নাম। এই দুটি শব্দের ভেতর অস্বীকার ও অপরিচিত হওয়ার অর্থ আছে। কবরে এসে মৃত ব্যক্তিকে দুজন ফেরেশতা প্রশ্ন করবেন, যাদের অদ্ভুত চেহারা ও ভীতিপ্রদ অবয়ব থাকবে। তাঁদের এই নাম দেওয়ার কারণ হলো, তাঁরা উভয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে অপরিচিত কিংবা পাপী মৃত ব্যক্তিরা তাঁদের অস্বীকার করে।
পরকালের প্রথম ধাপ হলো কবর। কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবরে মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে—
এক. তোমার রব কে?
দুই. তোমার দ্বিন কী?
তিন. এই ব্যক্তি কে ছিলেন, যাঁকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?
কবরবাসী যদি মুমিন হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারবে। আর যদি কাফির হয়, তাহলে বলবে, আফসোস! আমি কিছুই জানি না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৫৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০)
ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) তাঁর ‘ফাতহুল কাদির’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মুনকার নাকিরের দুই চোখ হবে তামার পাতিলের মতো বৃহৎ এবং তাঁদের দাঁত হবে গরুর শিংয়ের মতো আর তাঁদের কণ্ঠস্বর হবে বজ্রধ্বনির মতো। ’
মুনকার ও নাকিরের সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে তাঁরা কালো বর্ণের এবং নীল চোখবিশিষ্ট হবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয়, তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা আসেন তার কাছে। তাঁদের মধ্যে একজনকে মুনকার ও অন্যজনকে নাকির বলা হয়। তাঁরা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেন, তুমি এই ব্যক্তির [রাসুল (সা.)-এর] প্রসঙ্গে কী বলতে? মৃত ব্যক্তিটি (যদি মুমিন হয় তাহলে) আগে যা বলত তা-ই বলবে—তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল। তাঁরা উভয়ে তখন বলবেন, আমরা তো জানতাম তুমি এ কথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৭০ গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাকো। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে চাই। তাঁরা উভয়ে বলবেন, বাসরঘরের বরের মতো তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ছাড়া আর কোনো ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। অবশেষে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে তার বিছানা থেকে জাগিয়ে তুলবেন। মৃত ব্যক্তি যদি মোনাফেক হয়, তাহলে (প্রশ্নের জবাবে) বলবে, তাঁর প্রসঙ্গে লোকেরা একটা কথা বলত, আমিও তা-ই বলতাম। এর বেশি কিছু আমি জানি না। ফেরেশতা দুজন তখন বলবেন, আমরা জানতাম, এ কথাই তুমি বলবে। তারপর জমিনকে বলা হবে, একে চাপ দাও। সে লোককে এমন শক্ত করে জমিন চাপা দেবে যে তার পাঁজরের হাড়গুলো পরস্পরের মধ্যে ঢুকে পড়বে। (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তাকে তার এই বিছানা থেকে ওঠানো পর্যন্ত সে লোক এভাবেই আজাব পেতে থাকবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৭১)