আগামী ২২শে নভেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আয়োজন করতে চলেছেন চীন-আসিয়ান বৈঠক। আর তাতেই মিয়ানমার জান্তা নেতাকে যোগ দেয়ানোর জন্য তদবির করতে গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুর এবং ব্রুনাইয়ে যান চীনের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সান গুয়োজিয়াং। কিন্তু আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর ঘোর বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি। মিয়ানমার জান্তা নেতা হ্লায়িং ভার্চুয়াল ওই সম্মেলনে অংশ নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে। ১০ দেশকে নিয়ে গঠিত অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)-এর সদস্য হিসাবে মিয়ানমারের অবস্থান ফেব্রুয়ারির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে চলেছে। সামরিক বাহিনীর হাতে দেশের নোবেল জয়ী অং সান সু চি-এর সরকারের পতনের পর থেকেই মিয়ানমারের আকাশে ঘনিয়েছে অশান্তির কালো মেঘ। মিয়ানমারে সঙ্কটের কারণে হতাশ বেশ কিছু আসিয়ান সদস্য, তাদের জেনারেলদের ASEAN বৈঠক থেকে বাদ দিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আসিয়ান নেতারা মিয়ানমারের সামরিক প্রধান, সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে একটি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন থেকে অবরুদ্ধ করেন।কারণ তিনি একজন আসিয়ান দূতকে আইন প্রণেতাদের সাথে দেখা করার জন্য অনুমতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি পালন করতে ব্যর্থ হন। এখন আসিয়ান নেতারা চাইছেন যে, মিন অং- এর পরিবর্তে মিয়ানমারের একজন অরাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিত্ব সম্মেলনে যেন উপস্থিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করা হয়নি। ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই , মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর চায় মিন অং হ্লাইংকে নভেম্বর থেকে নিষিদ্ধ করা হোক। ২২ নভেম্বর চীন-আসিয়ান বৈঠকের আয়োজন করছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ব্রুনেই এই ৪ দেশ আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের মতো এখানেও একই অবস্থান বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে। তাদের দাবি, একটি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের দ্বারা মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব সম্পন্ন হোক। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তেউকু ফাইজাসাহ অক্টোবরের শীর্ষ সম্মেলনের আগে নেতাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে মিয়ানমারের অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিষয়ে তার অটল অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি আসিয়ানের বৈঠকে নিজের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন । তিনি বলেছেন যে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত মিয়ানমারের রাজনৈতিক স্তরে প্রতিনিধিত্ব করা উচিত নয়। যদিও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই এবং ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎক্ষণাৎ কোনো বক্তব্য রাখেনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি তবে মঙ্গলবার দেশের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, চীন আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য মিয়ানমারের সব পক্ষকে সমর্থন করছে এবং গণতান্ত্রিক স্থিতাবস্থা ফেরাতে চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে মিলে কাজ করতে প্রস্তুত। যদিও মিয়ানমারের সামরিক সরকার চীনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কোনো সাড়া দেয়নি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান দশকের পর দশক ধরে সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা বা সম্পৃক্ত না হওয়ার নীতিই মেনে চলেছে। কিন্তু মিয়ানমারের জান্তা নেতাকে যোগ দেয়ানোর জন্য তদবির করতে গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুর এবং ব্রুনাইয়ে গিয়ে চীনের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সান গুয়োজিয়াং – এর ভূমিকায় অসন্তুষ্ট আসিয়ান রাষ্ট্রগুলো। যদিও চীনের দাবি ,আসিয়ান দ্বারা প্রয়োগ করা অরাজনৈতিক প্রতিনিধি নীতি বজায় রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। গত এপ্রিলে, আসিয়ান নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলনে মিন অং হ্লাইং অংশ নিয়েছিলেন , সেখানে সহিংসতা বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের দোহাই দিয়ে সেই পথে হাঁটেনি মিয়ানমার। মিয়ানমার এই বছর ASEAN-এর জন্য চীনের সমন্বয়কারী দেশ, যার অর্থ তারা চীনের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না ।
সূত্রের খবর , সমন্বয়কারী দেশ হিসেবে মিয়ানমার বৈঠকের জন্য সবকিছু সেটআপ করবে, যেমন ভার্চুয়াল লিঙ্ক ইত্যাদি। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে পারে মিয়ানমার। অর্থাৎ আসিয়ান দেশগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করেই তারা মিন অং হ্লাইংকে ব্যবহার করতে পারে এই বৈঠকে। সেটা আঁচ করতে পেরেই ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই , মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর বয়কট করতে চেয়েছে মিন অং হ্লাইংকে।
সূত্র : yahoo.com