Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeধর্মমিসরীয় ইসলামী ব্যক্তিত্বের বিরল কৃতিত্ব

মিসরীয় ইসলামী ব্যক্তিত্বের বিরল কৃতিত্ব

এ বছর ইসলাম সেবায় অনন্য ভূমিকা রাখায় যৌথভাবে ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ভাষাবিদ শায়খ ড. হাসান মাহমুদ আল শাফেয়ি ও তানজানিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি হাসান মুওয়াইনি। ইসলামী জ্ঞানচর্চা, শিক্ষকতা, রচনা, গবেষণা, অনুবাদের পাশাপাশি পাকিস্তানের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদ প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ অবদানের জন্য ড. হাসানকে এ সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এর পাঠ্যসূচির উন্নয়ন, আল আজহারের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল অসামান্য।

ড. হাসান আল আজহারের কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্সের সদস্য ও দ্য ইউনিয়ন অব আরব লিঙ্গুয়েস্টিক একাডেমির সভাপতি।

আল আজহারের প্রথম আলেম হিসেবে তিনি কায়রোর বিখ্যাত অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী দর্শন, আকিদা, তাওহিদ, তাসাউফ বিষয়ে তাঁর প্রায় ১০টি গ্রন্থ রয়েছে। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ।

এর আগে ২০১৩ সালে ড. হাসান আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এ পুরস্কার পেয়েছিলেন। দীর্ঘ কাল ধরে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ একাডেমির দায়িত্ব পালন করে অভিধান প্রকাশের মাধ্যমে আরবি ভাষা ও পবিত্র কোরআনের ভাষা প্রসারে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ওই পুরস্কার দেওয়া হয়।

মায়ের অনুপ্রেরণা : মায়ের অনুপ্রেরণায় জীবনে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ড. হাসান তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘মাই লাইফ ইজ মাই স্টোরিজ’-এ লেখেন, ‘আমার বয়স যখন ৬৬ বছর তখন আমার শতবর্ষ বয়সী মায়ের মৃত্যু হয়। আমার জীবনে তিনি ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর জীবনযাপন ও মন-মানসিকতা আমাকে প্রভাবিত করে। ’

জন্ম ও বেড়ে ওঠা : ড. হাসান ১৯৩০ সালে মিসরের বেনি সুয়েফ প্রদেশের বিবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আল আজহারে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৬৩ সালে শায়খ হাসান কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুল উলুম ফ্যাকাল্টি থেকে আরবি ভাষা ও ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতক করেন। একই বছর তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও আকিদা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। অতঃপর ১৯৭৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ইসলামী দর্শন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। লেখাপড়া ও শিক্ষকতার জীবনে সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে দীর্ঘ সময় তিনি কারাভোগ করেন।

ফয়সাল পুরস্কার লাভ : বর্তমান বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড। গত ৫ জানুয়ারি চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্বের খ্যাতিমান সাতজনের নাম ঘোষণা দেওয়া হয়। গত চার দশকের বেশি সময় ধরে প্রতি বছর পাঁচ বিভাগে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের দেওয়া হয় এ পুরস্কার।

কিং ফয়সাল প্রাইজ হিসেবে এ বছর প্রত্যেক বিজয়ীকে দুই লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ১৭ কোটি দুই লাখ আট হাজার ৬৫৬ টাকা), ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণপদক ও আরবি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা একটি প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। কিং ফয়সাল পুরস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মক্কা নগরীর গভর্নর প্রিন্স খালিদ আল ফয়সাল তাদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করেন।  

১৯৭৭ সালে কিং ফয়সাল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিবছর অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্বের নির্বাচিত গুণী ব্যক্তিত্বদের সম্মাননায় এ পুরস্কার দেওয়া হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রাখা বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিমদের সেবার উদ্দেশ্যে এ পুরস্কারের যাত্রা হয়। প্রথম বছর শুধু ইসলামের সেবা, ইসলাম শিক্ষা ও আরবি সাহিত্য—এই তিনটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে চিকিৎসা ও বিজ্ঞানকে পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর বিশেষজ্ঞ কমিটি বিজয়ীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments