Wednesday, March 22, 2023
spot_img
Homeধর্মমিল-ফ্যাক্টরির সঙ্গে সম্পৃক্ত মাসায়েল

মিল-ফ্যাক্টরির সঙ্গে সম্পৃক্ত মাসায়েল

মিল-ফ্যাক্টরিতে দুটি পক্ষ থাকে (১) মালিক পক্ষ (২) শ্রমিক ও কর্মচারী পক্ষ। মালিকের জন্য শ্রমিকের কী করণীয় এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য মালিকের কী করণীয়, সে বিষয়ে কয়েকটি মাসআলা বর্ণনা করা হলো—

মালিক শ্রমিক মজুরদের নিজের ভাইয়ের মতো মনে করবে। তাদের মজুরির মান হবে নিয়োগ কর্তার জীবনযাত্রার মানের সমকক্ষ।

উভয়ের মধ্যে যেন আকাশ-পাতাল ব্যবধান না হয়।

এমনকি কৃপণতা করে কোনো মালিক নিম্নমানের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হলে শ্রমিকদের সে মান গ্রহণের জন্য বাধ্য করার অধিকার তার নেই।

শ্রমিকদের দ্বারা এমন কঠোর কাজ করাবে না, যাতে তারা অবসন্ন হয়ে পড়ে বা সত্বর ভগ্ন স্বাস্থ্য হয়ে যায়। কখনো এরূপ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তাদের বাস্তব ও আর্থিক সহায়তা করতে হবে।

মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে একবার কর্মচুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর করা বা নেওয়া অসম্ভব হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে (ওজর বা বাধ্যবাধকতা না দেখা দিলে) সেই চুক্তি বাতিল করার অধিকার কোনো পক্ষের নেই।

যৌক্তিক ওজর ছাড়া যখন ইচ্ছা একটি অজুহাত দাঁড় করিয়ে মালিক মিল/ফ্যাক্টরি লক আউট করতে পারবে না বা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ/ধর্মঘট করতে পারবে না।

মাসিক বেতনের ভিত্তিতে বা দৈনিক ভিত্তিতে বা কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে সব ভাবে শ্রমিক নিয়োগ করা যায়।

শ্রমিককে মাসিক বেতনের ভিত্তিতে নিয়োগ করে থাকলে কাজ না নেওয়ার দিনের বা ছুটির দিনেরও মজুরি তাকে দিতে হবে।

মালিক মজুরি পরিশোধ করার যে সময় নির্ধারণ করেছে সে সময়ের মজুরি প্রদান করা আবশ্যক। ঘটনাক্রমে কোনো দিন বা কোনো মাসে পিছিয়ে গেলে দোষ নেই, তবে এরূপ অভ্যস্ত হওয়া অন্যায়।

মালিক যদি অনুভব করে যে কোনো শ্রমিক ন্যস্ত কাজের ক্ষতি করছে অথবা সে মনোযোগের সঙ্গে কাজ করছে না, তাহলে মালিক তাকে কর্মচ্যুত করার অধিকার আছে। কিন্তু কর্মচ্যুত করার আগে দুটি কথা জানা দরকার। (১) শ্রমিকদের দৈহিক অসুুবিধার কারণে এরূপ হয়ে থাকলে তাদের কোনোরূপ চার্জ করা যাবে না। (২) মজুরির স্বল্পতাই যদি তার অমনোযোগিতার কারণ হয়ে থাকে, তাহলে তার মজুরি প্রচলিত মজুরির চেয়ে কম হয়ে থাকলে তাকে প্রচলিত মজুরির সমান দিতে হবে। এ দুটির কোনোটি কারণ না হলে মালিক তাকে কর্মচ্যুত বা অধিক কাজ করতে আইনত বাধ্য করতে পারবে।

মালিক শ্রমিককে তাগিদ করতে পারবে; কিন্তু গালাগাল বা মারপিট করতে পারবে না।

শ্রমিকের দ্বারা ওজরবশত অথবা ঘটনাক্রমে অনিচ্ছায় তার ব্যবহারে বা চার্জে দেওয়া মেশিন, যন্ত্রাংশ বা কোনো আবাসপত্রের ক্ষতি সাধন হলে মালিক তার থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে না। কিন্তু যদি সে স্বেচ্ছায় ক্ষতিসাধন করে, যেমন মেশিন সোজা না চালিয়ে বিপরীত দিকে চালায় অথবা তার ঠাণ্ডা গরম তারতম্য না করে তা চালায় আর ক্ষতি হয় অথবা ম্যাচের কাঠি ধরাতে গিয়ে মেশিনে আগুন লেগে গেল কিংবা গ্লাস, বরতন বা এ জাতীয় আসবাব এমন স্থানে রাখল, যেখানে ছেলেমেয়ে বা বিড়াল পৌঁছাতে পারে, ফলে তা ভেঙে গেলে, এরূপ হলে মালিক তার থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে পারে। ঘরের চাকরবাকরের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। মালিকের পরামর্শের বিপরীত কাজ করার ফলে ক্ষতি হলে সে জন্য শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মিল-ফ্যাক্টরির উৎপাদিত পণ্যের যে মান দেখে গ্রাহকরা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়, পরবর্তী সময়ে সে মান কম করে দেওয়া গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল। সুতরাং এটি পাপ ও অন্যায়।

মালিক যদি কোনো কাজের ব্যাপারে শর্তারোপ করে যে এ কাজ তুমি নিজেই করবে, তাহলে শ্রমিক সে কাজ অন্যকে দিয়ে করাতে পারবে না। করালে যদি ক্ষতি হয় তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নিয়োগকর্তাদের পক্ষ  থেকে যে টাকা পুরস্কার, অনুদান, বোনাস, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদিস্বরূপ দেওয়া হয়, তাকে কখনো মজুরির মধ্যে গণ্য করা যায় না।

বেতন দেওয়ার সময় নির্ধারিত থাকলে তার আগে বেতন দাবি করার অধিকার বর্তায় না। তবে মালিক ইচ্ছা করলে অগ্রিম দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাকি সময় বা বাকি দিনগুলোর কাজ করে দেওয়া শ্রমিকদের জিম্মাদারি হয়ে দাঁড়ায়।

(ইসলামী ফিকাহ, তৃতীয় খণ্ড অবলম্বনে)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments