Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeলাইফস্টাইলমালয়েশিয়া প্রবাসীদের হার্ট অ্যাটাক : মৃত্যুর অজানা রহস্য

মালয়েশিয়া প্রবাসীদের হার্ট অ্যাটাক : মৃত্যুর অজানা রহস্য

মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মৃত্যুর হার। সুস্থ-সবল একজন কর্মজীবী প্রবাসী হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন, এটাই এখন সবচেয়ে বড় রহস্য মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবাসীদের কাছে।

ঠিক কী কারণে প্রবাসীরা হার্ট অ্যাটাক করছে এর কারণ উদঘাটন করা গেলে এর প্রতিকারও হয়ত সম্ভব ছিল। এর কোনো সঠিক তদন্ত না হওয়ায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু প্রবাসীদের কাছে এখনো পুরোপুরি রহস্যই থেকে যাচ্ছে।

সাধারণত চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, যখন হৃদপিণ্ডের কোনো শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে তখন একজন মানুষ হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চমাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক ও পারিবারিক চাপ এবং শারীরিক পরিশ্রম না করাই মূলত প্রধান কারণ।

কিন্তু উপরিউক্ত উপসর্গের মধ্যে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা ঠিক কোনো উপসর্গে বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক করেন তা জানতে হলে যথাযথ তদন্ত করে এর প্রতিরোধ প্রয়োজন। তবে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা লাশ দেশে পাঠানোর কাজেই ব্যস্ত থাকেন। বছরে ঠিক কতজন প্রবাসী হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করছেন এর পরিসংখ্যানও কারো কাছে নেই। দূতাবাসে লাশ পাঠানোর দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা এই পরিসংখ্যান জানাতে রাজি হননি।

হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ে না থাকায় প্রবাসীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তার কারণ হচ্ছে বিদেশের মাটিতে একজন কর্মজীবী প্রবাসীর মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এতে করে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর জগদ্দল পাথরের মত বোঝা চাপে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভোগান্তির শিকার হন উভয় পক্ষই।

মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশী গণমাধ্যম কর্মী থেকে শুরু করে প্রবাসী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ মনে করেন, চাকরি ও বেতনের অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ও মানসিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ, বাসস্থান, মালিকপক্ষের ব্যবহার, পুলিশি হয়রানি, ঋণের চাপ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি নানা কারণে ডিপ্রেশনে পড়ে প্রবাসীরা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে পারেন। মালয়েশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সচেতনতা এখনই জরুরি।

মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা মো: জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, আমি বিগত দুই বছরের করোনাকালে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে প্রায় ৭০টি লাশ দেশে পাঠিয়েছি যার বেশিরভাগই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু।

এর কারণ হিসেবে তিনি ধারণা করে বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিন-চার লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে খরচ তুলতে না পারা, বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে যাওয়া, বৈধ হতে গিয়ে দালালের প্রতারণার শিকার হওয়া, বেতন ও কাজের অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ডিপ্রেশন, করোনা মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাব ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত প্রবাসীরা এই নীরব ঘাতকের শিকার হচ্ছেন। তবে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রবাসীদের জীবনমান উন্নয়নসহ তাদেরকে সচেতন করতে হবে, এর জন্য সঠিক কারণ চিহ্নিত করে এর সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments