মোস্তাফিজুর রহমান সাফি
বিয়ে করলাম!
প্রথম কৈশোরে দেখা স্বপ্নের মেহেদি রাঙানো নরম হাতখানি আজ আমি জয় করলাম! তুমুল উচ্ছ্বাসে কাঁপা আমার ভীতু হৃদয়ে দুর্বার বসন্তের কল্লোল! তার সলজ্জ চমকিত কণ্ঠস্বর বিয়ে বাড়ির হট্টগোলের ভেতরেও যেন কোকিলের কুহুতান হয়ে আমার কানে এসে বাজতে লাগলো! কিন্তু হায় আমার পোড়া কপাল, বসন্তযাপন আর হলো না!
পারিবারিকভাবে বিয়ে। কিছুটা তড়িঘড়ি তো ছিলই। সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামে এসেছিলাম পাত্রী দেখতে। অমন মায়াভরা চোখের চাহনি যার; তা যদি আগে জানতাম, তবে এক মাসের আগ্রীম ছুটি নিয়ে তবেই আসতাম! এ যে আমার সমগ্র জীবনের আরাধ্য মায়াহরিণের সন্ধান লাভ!
বিকেলেই ফিরতে হবে আমাকে। বিদায় বেলায় তাকে আমার স্মার্টফোন দিয়ে বললাম, ‘তোমাকে দেবার মতো কিছু নেই আমার। যা আছে, তা কোনো কাজে আসেনি এত বছর। বেকার কর্মহীন এক অবস্তু, আমার ‘হৃদয়’, নেবে?’ সে কিছু বলল না, শুধু হাসলো। সেই হাসির তরঙ্গ আমার সব অস্তিত্বে মাখিয়ে নিয়ে রওনা হলাম। পেছনে নববধূকে রেখে।
স্বপ্নে বিভোর হয়ে কেটে গেল সাতদিন। কোনো কাজে আমার মন বসে না। অন্য কিছুও ভালো লাগে না। ভালো লাগে শুধু তার কথা ভাবতে। মনে মনে আমি কতো কথা যে সাজিয়ে রেখেছি বলার জন্য। ফোনেও খুব বেশি কথা হতো না। তার সঙ্গে সব সময় ছোট বোন থাকে। অন্যের সামনে কথা বলতে তার আপত্তি। আমিও জোর করিনি। আর তো মাত্র কিছুদিন। তারপর তাকে নিয়ে আসবো আমার শহরে।
এরপর একদিন সে আমাকে ফোন দিলো। বলল, চাকরি পেয়েছে! আমি অবশ্য কিছুই জানতাম না। অনেক খুশি হয়েছিলাম সেদিন। যদিও আমার শ্বশুর মেয়েকে চাকরি করাতে চাচ্ছিলেন না। আমি সবাইকে বুঝিয়ে রাজি করালাম। তার স্বপ্নের পথে আমি বাধা হতে চাই না!
এরপর কাউকে না জানিয়েই একদিন তার অফিসে গেলাম দেখা করতে। দুই হাতভর্তি ফুল, চকলেট, চুড়ি, শাড়ি, প্রসাধনী, আরও কতো কী! ভেবেছিলাম আজ তাকে চমকে দেব। কিন্তু হায় আমার পোড়া কপাল, এ আমার কী হলো! প্রথম দেখাতেই সে বলল, ‘বাবা আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছেন। আমি ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। আমি একজনকে…’
আমি এবারও তার স্বপ্নের পথে বাধা হইনি।