বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষই সৃষ্টির সেরা। প্রথম শ্রেণির মানুষ হলেন নবী-রাসুলরা। নবী-রাসুলের মধ্যে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। এরপর তাঁর পরিবারবর্গ (আহলে বাইত), তারপর সাহাবিরা, তারপর তাবেঈরা, তারপর তাবে-তাবেঈন।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, শ্রেষ্ঠ যুগ আমার যুগ। তারপর সাহাবিদের যুগ, তারপর তাবেঈদের যুগ, তারপর তাবে-তাবেঈদের যুগ। (তিরমিজি)
পবিত্র কোরআনে উত্তম মানুষকে মুহসিন, মুত্তাকি, সিদ্দিক, সালেহ, আদিল ইত্যাদি অভিধায় শনাক্ত করা হয়েছে।
মিশরি সাহিত্যিক মোস্তফা লুতফি আল-মানফলুতি বলেছেন, মানুষ চার স্তরে বিভক্ত :
ক) যারা অন্যের উপকার করে এবং নিজেরও উপকার করে। এরা দুর্লভ, এদের গ্রিক দার্শনিক ডাইওজিনাস দিনের বেলাও প্রদীপ হাতে খুঁজে বেড়াতেন।
খ) যারা অন্যের উপকারের দ্বারা নিজেও উপকৃত হওয়ার ফন্দি করে। এরা স্বৈরাচারী। এদের ভাবনা যেন এমন, দুনিয়ার মানুষগুলো জবাই করে দিলে এদের রক্ত জমাট বেঁধে সোনা হয়ে যেত।
গ) যারা নিজের উপকার করে কিন্তু অন্যের উপকার করে না, তারা হলো লোভাতুর কুকুরতুল্য।
ঘ) যারা নিজের উপকার করে না এবং অন্যের উপকারও করে না, তারা হলো নির্বোধ কৃপণ, যেন সিন্দুক। সম্পদ সিন্দুকে থাকে, অথচ সিন্দুক তার কোনো সাদ ও উপকার পায় না।
মহান আল্লাহ জড় ও জীব মিলে বিশ্বচরাচরে হাজার হাজার বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এসব সৃষ্টির মধ্যে জিন, ফেরেশতা এবং মানুষও আছ। তবে মানুষই আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং তাদের পানিতে ও স্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছি, তাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭০)
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যখন আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেন, তখন তা দুলতে থাকে। অতঃপর তিনি পর্বতমালা সৃষ্টি করে তার ওপর তা স্থাপন করেন। ফলে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়।
ফেরেশতারা পর্বতমালা দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পর্বত থেকে মজবুত কি কিছু আছে? আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, তা হলো লোহা।
ফেরেশতারা আবার প্রশ্ন করলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে লোহা থেকে মজবুত কি কিছু আছে? আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, আছে, তা হলো আগুন।
ফেরশতারা আবার প্রশ্ন করেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুনের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী কি কোনো কিছু আছে? আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, আছে, তা হলো বাতাস।
ফেরেশতারা প্রশ্ন করেন, হে আমাদের রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে বাতাসের চেয়ে বেশি প্রবল কি কিছু আছে? আল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ, আছে, তা হলো আদম সন্তান। সে ডান হাতে যা দান করে, বাঁ হাত থেকে তা গোপন রাখে। ’ (মুসনাদ আহমদ)
এ ছাড়া প্রিয় নবী (সা.) বলেন, বিচার দিবসে আল্লাহর কাছে মানুষ অপেক্ষা অন্য কোনো সৃষ্টি অধিক সম্মানের হবে না। জিজ্ঞেস করা হয়, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের ক্ষেত্রেও কি এটা প্রযোজ্য হবে? অর্থাৎ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের চেয়েও কি মানুষের মর্যাদা বেশি? প্রিয় নবী (সা.) বলেন, নিকটবর্তী ফেরেশতারাও এক শ্রেণির মানুষের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হবে না। (বায়হাকি)
বস্তুত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অনন্য উচ্চতায় সমুজ্জ্বল। এ জন্য লোহার ক্ষমতা হয়নি ইসমাঈল (আ.)-এর গলা কাটার, আগুনের ক্ষমতা নেই ইবরাহিম (আ.)-কে পোড়ানোর, পানির শক্তি-সামর্থ্য হয়নি অতলান্ত অন্ধকার সাগরগহ্বরে মাছের পেটে ইউনুস (আ.)-এর দোয়া বন্ধ করার। ইসমে আজমের জোরে মাছের উদর হতে তিনি পেলেন পরিত্রাণ। সুলাইমান (আ.)-এর অনুগত ছিল বাতাস তথা বায়ুপ্রবাহও। আবার
‘তুমি মুছা নবীকে দুশমনেরই ডরে
সিন্ধুকে ভরিয়া দিলে ভাসায়ে সাগরে
প্রাণে ছিল যাহার ভয়, সেথায় পেল সে আশ্রয়…
দুশমনেরই হাতে তাঁহার বাঁচাইলে প্রাণ। ’
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ
কাপাসিয়া, গাজীপুর